দিনের ৮ ঘণ্টাই বিদ্যুৎহীন, কাজ চলে জেনারেটরে

লোডশেডিংয়ের কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক কার্যালয়। এখানে প্রায় দিনই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। জেনারেটর দিয়ে কোনোমতে চলে কার্যালয়টির কার্যক্রম। এখানে সেবা নিতে এসে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার নাজিরেরবাগ রাজউকের ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প এলাকায় কার্যালয়টির অবস্থান। গত ১৮ সেপ্টেম্বর কার্যালয়টিতে কার্যক্রম শুরু হয়।

কার্যালয়টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। জেনারেটরই এখন ভরসা। প্রতিদিন এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে দুই ঘণ্টা করে জেনারেটর চালিয়ে গ্রাহকদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের উচিত গ্রাহকদের সেবার কথা চিন্তা করে এখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা।

পাসপোর্ট–সংক্রান্ত কাজের জন্য যাত্রাবাড়ীর এই কার্যালয়টিতে আসেন যাত্রাবাড়ী, দোহার, খিলগাঁও, সবুজবাগ, ডেমরা, কদমতলী, কোতোয়ালি, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ও শ্যামপুর এলাকার মানুষ।

১৭ ডিসেম্বর কার্যালয়টি ঘুরে দেখা গেছে, শতাধিক নারী-পুরুষ সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় সারি থমকে আছে। অনেকেই বিরক্ত হয়ে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছেন। কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও অলস সময় কাটাচ্ছেন।

যাত্রাবাড়ীর দনিয়া থেকে সেদিন এসেছিলেন নজরুল ইসলাম (৪০)। তিনি জানান, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি এসে জানতে পান, বিদ্যুৎ নেই। পরে জেনারেটর চালু করার পর তিনি আবেদনপত্র জমা দেন। কিন্তু ছবি তুলতে পারছেন না। কখন বিদ্যুৎ আসবে, পাসপোর্ট কার্যালয়ের লোকজনও কিছু জানাতে পারেননি।

কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া থেকে আসা সায়রা বানু (৩০) বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি এসেছিলেন। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেনারেটরের মাধ্যমে কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়।

দোহারের জয়পাড়ার বাবুল হোসেন (৩২) বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় সময় নষ্টের পাশাপাশি কাজের গতিও কমে গেছে। এতে আমরা দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছি।’ তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর স্বার্থে এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা উচিত।

জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আঞ্চলিক এই কার্যালয়টির সহকারী পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লোডশেডিং এখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় দিনই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। তিনি বলেন, যেহেতু এটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, তাই এখানে সকাল-সন্ধ্যা বিদ্যুৎ থাকা উচিত।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এই আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনটি এসেছে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে। কিন্তু এখনো সমিতি নিশ্চিত হতে পারেনি বিদ্যুৎ সরবরাহের কেন এই হাল।

জানতে চাইলে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪–এর জিনজিরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে না। পদ্মা সেতুর চার লেনের কাজ চলার কারণে তার ছিঁড়ে বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে।