মঠবাড়িয়ায় সাংসদ রুস্তমের শোভাযাত্রায় হামলা

জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়া পৌঁছালে স্থানীয় শহীদ মোস্তফা খেলার মাঠে সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নেতা-কর্মীরা। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়া পৌঁছালে স্থানীয় শহীদ মোস্তফা খেলার মাঠে সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নেতা-কর্মীরা। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীর শোভাযাত্রায় হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ১২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার সাফা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। 

সাংসদের সমর্থকেরা বলছেন, ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। তবে ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, হামলার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন।

সাংসদের সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শনিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে দলে যোগ দেন পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়া পৌঁছান। সাংসদের আগমন উপলক্ষে শোভাযাত্রার আয়োজন করেন সমর্থকেরা। দুপুরে তিন শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ঝাউতলা এলাকায় সাংসদকে স্বাগত জানানোর জন্য তাঁর সমর্থকেরা যাচ্ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে সাফা বাজার এলাকায় স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। গুরুতর আহত ফারুক হোসেন (৪৫), আবদুল হক ফরাজী (৭০) ও শাহ আলমকে (৩৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ঘটনায় আহত ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা সাংসদকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছিলাম। সাফা বাজারের কাছে ধানীসাফা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাতুব্বরের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জন আমাদের ওপর হামলা চালান।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ফয়সাল মাতুব্বর বলেন, ‘সেখানে অন্য একটি কাজে গিয়েছিলাম। হামলার সঙ্গে আমরা জড়িত নই। রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য এ অভিযোগ করা হচ্ছে।’

ওই ঘটনার পর পুলিশের একটি দল সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীকে ঝাউতলা থেকে নিরাপত্তা দিয়ে উপজেলা সদরে নিয়ে যায়। বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি স্থানীয় শহীদ মোস্তফা খেলার মাঠে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমার লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। অতীতে মঠবাড়িয়ার রাজনীতিতে এ ধরনের প্রতিহিংসা ও প্রতিপক্ষের ওপর হামলার সংস্কৃতি ছিল না। সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে।’ হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।

পরে রুস্তম আলী ফরাজী মোবাইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঠবাড়িয়া আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এক সাংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমানের সমর্থকেরা বখাটে ছেলেদের দিয়ে আমার লোকজনের ওপর হামলা করেছে। এ ধরনের কার্যকলাপ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। বিষয়টি জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে আশরাফুর রহমান মোবাইলে বলেন, ‘ওই হামলার ঘটনার সঙ্গে আমি বা আমার সমর্থকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি (সাংসদ) বিভিন্ন সময় দল পাল্টিয়েছেন। তাঁর একসময়ের অনুসারীরাই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।’

পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির দাবি করেন, সাংসদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেনি। বিচ্ছিন্ন একটি জায়গায় সাংসদের কর্মীদের সঙ্গে কিছু হাতাহাতি হয়েছে। যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন রুস্তম আলী ফরাজী। ওই বছরের ২১ জুলাই স্থানীয় ডাকবাংলোতে সাংসদের কর্মিসভায় হামলা হয়। এ ছাড়া গত বছর ২৪ জুন সাপলেজা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাংসদের এক সভায় হামলার ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে সাংসদের অনুসারীরা অভিযোগ করেছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি এম সরফরাজ বলেন, ‘আমি পিরোজপুরে ছিলাম। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই হামলার ঘটনা ঘটেছে।’