'দল ও মার্কা নয়, যোগ্য দেখে ভোট দিব'

‘মুই যোগ্য লোক দেখে হেনে মোর ভোটটা দিম। যার নগত হামরা যাবা পারিমো, যাক কথাবাত্তা কহিবা পারিমো, তাকেই হামার দরকার।’ পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কথাগুলো বলেন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাতখামার মহল্লার রিকশাচালক তারা শেখ (৬০)।

একই কথা বলেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরদারপাড়া মহল্লার ভোটার রিকশাচালক আবদুল করিম (৫৫)। তিনি বলেন, ‘হামরা মার্কা-টারকা আর পাটিপুটি দেখিবা নাহি। ইমহার মধ্যে যায় হামাক উন্নত করিবে, ড্রেন পরিষ্কার করিবে, তাকেই মুই ভোটটা দিম। বাড়ির সবাকে ওইঠে দিবা কহিম।’ সাতখামার এলাকার ভোটার গাড়িচালক খতিবুর রহমান (৪৫) বলেন, ‘দল ও মার্কা বুঝি না। যোগ্য দেখে ভোট দিব। আমাদের এলাকাটা অনেক পিছিয়ে আছে।’

দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২৮ ডিসেম্বর পৌরসভায় এই নির্বাচন হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা ছুটছেন এক ভোটার থেকে আরেক ভোটারের বাড়িতে। নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাঁরা। বিপণিবিতান, ফুটপাত থেকে চায়ের দোকান, সর্বত্রই চলছে ভোটের উৎসব। তবে অধিকাংশ ভোটার দলের চেয়ে ব্যক্তির ইমেজে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা বলেছেন।

২০০১ সালে উপজেলা সদরকে পৌরসভা ঘোষণার পর পাশের আটোয়ারীর সাতখামার ও কুরু-লিয়া মৌজাকে বোদা পৌরসভার আওতাভুক্ত করা হয়। পরে দুবার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও সীমানা জটিলতার মামলায় তা স্থগিত হয়। অবশেষে সব জটিলতা নিরসন করে ১৭ বছর পর আবারও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে ভোট উৎসব। নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক দুজন এবং আওয়ামী লীগের একজনসহ চারজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ২৫ জন।

বিএনপির প্রার্থী হকিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে শুরু করে যুবদলের রাজনীতি করেছি। বিএনপির বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে উপস্থিত ছিলাম। বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। আশা করছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমি বিএনপির সমর্থকসহ দলমত-নির্বিশেষে সবার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হব।’

স্বতন্ত্র (বিএনপির বিদ্রোহী) প্রার্থী এ কে এম আখতার হোসেনের দাবি, ‘মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বিএনপি সঠিক মূল্যায়ন করেনি। ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতি করেছি। একাধিকবার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

অন্যদিকে একক প্রার্থী হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ওয়াহিদুজ্জামান সুজা। তিনি ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ সমর্থক সব সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভোট পাব বলে আশা করছি। নির্বাচিত হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করব। আমি প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করব। সড়ক উন্নয়ন, ড্রেন নির্মাণ, শিশু পার্কসহ এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করব।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আশা করছি, ২৮ ডিসেম্বর অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ হবে।