মাঘী পূর্ণিমার আগেই জোয়ারাধার চাই

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির l প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির l প্রথম আলো

মাঘী পূর্ণিমার আগে ‘ক্রাশ প্রোগ্রামে’র মাধ্যমে বিল কপালিয়ায় জোয়ারাধার (টিআরএম) চালুর দাবি জানিয়েছে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। না হলে ভবদহ স্লুইসগেটের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখানে কেটে শ্রী নদী সংযুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

গতকাল বুধবার দুপুরে যশোর শহরের নীল রতন ধর সড়কে কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ ডিসেম্বর যশোরে আসছেন। ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভবদহের বিপন্ন জনগণকে মহা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতাদের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক ও সাতক্ষীরা-২ আসনের সাংসদ মোস্তফা লুৎফুল্লাহসহ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে অনেক যুক্তিতর্কের মাধ্যমে তাঁদের পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝানো হয়। শেষ পর্যন্ত জনগণের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে টিআরএমবিরোধী চক্রান্ত ভেদ করে বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এখন পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৯ সালের আগে বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এককথায় বিষয়টি ঝুলে গেল। তত দিনে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটবে। ভবদহের ভাটিতে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার নদী ভরাট হয়ে যাবে। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ থেকেই জলাবদ্ধতা শুরু হবে এবং জুনের মধ্যে নদী ব্যাপকভাবে ভরাট হয়ে ভবদহ অঞ্চল বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। টিআরএম করার পরিস্থিতিই হুমকির সম্মুখীন হবে। তখন আর টিআরএম করার বাস্তবতাই হয়তো থাকবে না।

সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, ৩১ জানুয়ারি মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু করা না হলে স্লুইসগেটের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখান কেটে দিয়ে সরাসরি শ্রী নদীর সংযোগ দেওয়া হোক। এ কাজে তেমন খরচ লাগবে না। এটা হলে ফেব্রুয়ারি থেকে উঠে আসা পলিতে নদী ভরাট হবে না। ভবিষ্যতে এলাকার সম্ভাব্য বিলে টিআরএম করার পরিস্থিতিও অক্ষুণ্ন থাকবে। এলাকা জলাবদ্ধ হবে না। ফসল ফলানো সম্ভব হবে। মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্প বাতিল করে। এর পরিণতিতে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ভবদহ অঞ্চল আবার ব্যাপক জলাবদ্ধতার শিকার হয়। চার উপজেলার ১৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি। স্বাভাবিকভাবে আবাদ করার পরিস্থিতিও নষ্ট হয়েছে। ঘটেছে মানবিক বিপর্যয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জনগণের জীবন-মরণ আন্দোলনের পর এ বছরের ১৬ মার্চ পানিসম্পদমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি কর্মশালায় বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পাউবোর যুক্তিহীন দীর্ঘসূত্রতা না হলে এবার মাঘী পূর্ণিমার আগে টিআরএম করা সম্ভব হতো।

সংবাদ সম্মেলনে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আবদুল হামিদ, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস, মাসুদ হাসান, স্বদেশ সরকার, জিল্লুর রহমান ভিটু, নাজিম উদ্দিন, জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।