বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে কার্ড রিচার্জে ভোগান্তি

বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার
বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার

বিদ্যুতের গ্রাহক পরিষেবায় নতুন ধারার সূচনা করেছে যে প্রি-পেইড মিটার, তার কার্ড রিচার্জ করতে গ্রাহক পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। কার্ড রিচার্জের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাহকের সময় অনেক অপচয় হচ্ছে। নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের শাখায় গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কার্ড রিচার্জ করতে হচ্ছে।

এ ছাড়া প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজও চলছে ধীরগতিতে। মাস ছয়েক ধরে প্রতি মাসে গড়ে এক লাখের কিছু বেশি মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। এভাবে জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে মোট সাত লাখের মতো মিটার বসানো হয়েছে। অথচ আগামী জুনের (২০১৮) মধ্যে ৭০ লাখ গ্রাহকের বাড়িতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন সম্পন্ন করার কথা। যা বর্তমান গতিতে সম্ভব হবে না।

গ্রাহক কথা

অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, রিচার্জ করার জন্য অনুমোদিত ব্যাংক ও শাখা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে দীর্ঘ লাইন দিতে হচ্ছে। তা ছাড়া ‘কমিশন কম’ বলে ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখাগুলো প্রি-পেইড মিটার রিচার্জের জন্য কর্মী ও ডেস্কের সংখ্যা সীমিত রাখছে। এ কারণে প্রি-পেইড মিটারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন গ্রাহক।

ঢাকার আজিমপুরের একজন গ্রাহক গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম প্রি-পেইড মিটারের ব্যবহার শুরু হলে বিল নিয়ে ঝামেলামুক্ত হওয়া যাবে। কিন্তু এখন কার্ড রিচার্জ করা খুবই বিরক্তিকর কাজ হয়ে উঠেছে। কোথায় রিচার্জ করা যাবে তার কোনো ঠিক নেই। কতক্ষণ সময় লাগবে তাও অনিশ্চিত। এভাবে তো চলা কঠিন।’

মোহাম্মদপুরের একজন গ্রাহক বলেন, ‘এখন ইচ্ছা হচ্ছে যে এলাকায় এখনো প্রি-পেইড মিটার লাগেনি, বাসা বদল করে সেই এলাকায় চলে যাই। অতি দ্রুত এটা সহজ করা না হলে আমরা প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করব না।’

আশ্বাস ও পরামর্শ

সরকারের পক্ষ থেকে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম সমন্বয় করছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও নীতি সহায়তা সংস্থা পাওয়ার সেল। গ্রাহক ভোগান্তির বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, সমস্যাটি তাঁরাও জেনেছেন। সমাধানের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তবে পুরো সমাধানসূত্রটি কার্যকর হতে আরও মাস তিনেক লাগবে।

মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, মিটারের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের সংখ্যা ও শাখা বাড়ানো এবং সাধারণ দোকান থেকেও কার্ড রিচার্জ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও রিচার্জ করার পদ্ধতি চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে যেকোনো গ্রাহক যেকোনো সময় রিচার্জ করে নিতে পারেন। আর মিটার স্থাপনের গতি বাড়ানোরও চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে গ্রাহক ভোগান্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণে কর্মরত সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, এত বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের প্রি-পেইড মিটারের কার্ড রিচার্জের বিষয়টি মোবাইল ফোনে রিচার্জ করার মতো ব্যবস্থায় যেতে হবে। যেন সাধারণ মানুষ দোকানে গেলেই রিচার্জ করতে পারে বা গ্রাহক যেন মোবাইল ফোন থেকেই রিচার্জ করতে পারে। তিনি বলেন, রিচার্জের বিষয়টি ব্যাংক বা ভেন্ডিং স্টেশনের ওপর রাখা ঠিক হবে না। এত গ্রাহককে সামাল দেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হবে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিদ্যুৎ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা। সেই লক্ষ্যে ২০২০-২১ সালের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের পরিষেবায় যুক্ত করা হবে। তবে ‘লাইফ লাইন’ গ্রাহকদের (যাঁদের মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহার ৫০ ইউনিটের মধ্যে) প্রি-পেইড মিটার দেওয়া হচ্ছে না।

প্রি-পেইড মিটারে গ্রাহক রিচার্জ কার্ড ব্যবহার করে নিজের প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। বিতরণ কোম্পানিগুলোও বিদ্যুৎ সরবরাহের আগেই বিল পাবে, যা এখন পায় প্রায় দুই মাস পর। এ ব্যবস্থায় গ্রাহক যত টাকা রিচার্জ করবেন, তত টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহারের পর সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে বন্ধ হওয়ার আগে গ্রাহকের মিটার সংকেত দেবে, যা দেখে গ্রাহক রিচার্জ করতে পারবেন। অবশ্য কোনো গ্রাহকের রিচার্জ বৃহস্পতিবার বিকেলে শেষ হয়ে গেলে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত (ফ্রেন্ডলি আওয়ার) বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হবে না।