খুলনায় আরও দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে উৎপাদন বন্ধ

বকেয়া মজুরির দাবিতে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত আরও দুটি পাটকলে গতকাল শনিবার উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকেরা। এ নিয়ে নয়টি পাটকলের মধ্যে আটটির উৎপাদনই বন্ধ হলো। শুধু কার্পেটিং জুট মিল চালু আছে।

শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, মজুরি দেওয়া হবে না, এ কথা শোনার পর গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে খুলনা নগরের খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের প্লাটিনাম ও সকাল ১০টায় ক্রিসেন্ট জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় দৌলতপুর ও স্টার জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকেরা বাইরে বেরিয়ে যান। শ্রমিকদের অভিযোগ, আট সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে প্লাটিনাম ও ক্রিসেন্ট জুট মিলে। আর স্টার জুট মিলে ছয় সপ্তাহ ও দৌলতপুর জুট মিলে চার সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। বৃহস্পতিবার খুলনার আটরা শিল্প এলাকার ইস্টার্ন ও যশোরের রাজঘাট এলাকার জেজেআই জুট মিলের উৎপাদন শ্রমিকেরা বন্ধ করে দেন। ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিকদের সাত সপ্তাহ ও জেজেআই জুট মিলের শ্রমিকদের ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকার পর শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। গতকাল সকাল ৬টা থেকে পাটকলগুলো চালু করার কথা ছিল। কিন্তু ওই ছয়টি কলের শ্রমিকেরা বিআইডিসি সড়ক ও নিজ নিজ কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। আর তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন আলীম ও খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকেরা। আলীমে বাকি আছে আট সপ্তাহের মজুরি আর খালিশপুর জুট মিলের বাকি রয়েছে সাত সপ্তাহের। শ্রমিকেরা ঘোষণা দিয়েছেন, মজুরি না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা আর কাজে ফিরে যাবেন না।

এর আগে গত নভেম্বর ও চলতি ডিসেম্বর মাসে পাটকলগুলোর জন্য ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদ। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২ জানুয়ারি বিজেএমসির আওতাধীন সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে ২৪ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করা হবে।

জানতে চাইলে সংগঠনের আহ্বায়ক ও প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দিন বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নানা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদ। তবে বৃহস্পতিবার থেকে বকেয়া মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল না সংগঠনটি। শ্রমিকেরা নিজেরাই ধর্মঘট শুরু করেন। বর্তমানে শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। 

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, পাটকলগুলোতে প্রচুর পণ্য মজুত রয়েছে। বিক্রি না হওয়ায় মূলত পাট খাতে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সম্প্রতি সব পাটকলের কিছু কিছু পাটপণ্য বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখনো টাকা পাওয়া যায়নি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে টাকা পাওয়া গেলে কিছু মজুরি পরিশোধ করা হবে।

বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে গাজী শাহাদাত বলেন, খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি বিজেএমসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। আগামীকাল (আজ রোববার) সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।