আমরণ অনশনে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা

আমরণ অনশন শুরু করেছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোববার এই কর্মসূচি চলছে। ছবি: প্রথম আলো
আমরণ অনশন শুরু করেছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোববার এই কর্মসূচি চলছে। ছবি: প্রথম আলো

টানা পাঁচ দিন অবস্থান কর্মসূচি শেষে আজ রোববার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি চলছে।

দেশের সরকারস্বীকৃত সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন এসব শিক্ষক।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে এ কর্মসূচি চলছে। গত শুক্রবার ফেডারেশনের নেতারা বৈঠক করে আজ থেকে অনশন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেন।

ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, কিছুক্ষণ আগে থেকে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন।

গোলাম মাহমুদুন্নবী গতকাল জানান, তাঁদের একটাই দাবি, সেটা হলো সরকারস্বীকৃত ৫ হাজার ২৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করতে হবে।

ফেডারেশনের সভাপতি বলেন, ২০১১ সাল থেকে সরকার শুধু আশ্বাসই দিচ্ছে। তাই এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রাণ গেলেও তাঁরা অনশন থেকে সরবেন না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা চান তাঁরা। গতকাল পঞ্চম দিনেও অবস্থান কর্মসূচিতে কয়েক শ শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেন। আজ অনশনে যোগ দিতে বিভিন্ন স্থান থেকে এক হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী ঢাকায় আসছেন।

অবস্থানরত শিক্ষকনেতারা বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও একই নিয়মনীতিতে পরিচালিত হয়। একই শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম ও প্রশ্নপদ্ধতি অনুসরণ করে। শিক্ষার্থীরাও বোর্ড থেকে একই মানের সনদ অর্জন করে। অথচ বেতন পান না তাঁরা। যদিও দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে ২১ লাখ চাকরিজীবীর বেতন বেড়েছে।

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ দেওয়া হয়, সেগুলোকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলা হয়। আর যেগুলো এমপিওভুক্ত নয়, সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। এগুলোকে সংক্ষেপে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলা হয়।

বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৪ লাখের বেশি। এর বাইরে স্বীকৃতি পেলেও নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২ টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল।

গতকাল সচিবালয়ে জেএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকেরা। জবাবে মন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে চেষ্টা করছেন জানিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন থেকে সরে আসার অনুরোধ জানান। তবে এ বিষয়টির সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় জড়িত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই কমিটি যে নীতিমালা করে দেবে সে অনুযায়ী কাজ হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে নয়টি শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ মোর্চা-শিক্ষক কর্মচারী সংগ্রাম কমিটি শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ ১১ দফা দাবিতে শিগগিরই ধর্মঘটে যাচ্ছে। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।