সাত সিটিসহ নির্বাচনের বছর শুরু

নির্বাচন কমিশন ভবন
নির্বাচন কমিশন ভবন

শুরু হলো নতুন বছর। ২০১৮ সালটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছরের শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে অন্তত সাতটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন হবে। অর্থাৎ বছরজুড়েই আলোচনা-সমালোচনার ‘মধ্যমণি’ থাকবে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনের এই বছরে রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বলে পরিচিত বিএনপির জন্য হবে ‘অনেক হিসাব মেলানোর’ বছর। সরকারি দলের চ্যালেঞ্জ হবে তাদের অধীনে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ও বিতর্কিত নির্বাচন না করা, বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনকে সংগঠিত হতে না দেওয়া।

আর বিএনপিকে সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হবে। বিএনপির জন্য কাজটা অনেক কঠিন। কেননা, এই দাবিতে আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে দলটি। দলটি চাইছে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামার। অবশ্য সেই আন্দোলনে যাওয়ার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো কেমন হবে, সেই নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থীদের অবস্থান কেমন হবে, এ বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে।

নির্বাচনের বছরে নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে কী করতে হবে, সে ব্যাপারাটা অনেকটাই পরিষ্কার। তবে সব পক্ষকেই কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পৃথক ভূমিকা থাকে। সব পক্ষ যখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়, কেবল তখনই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া কঠিন। তাঁর মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়া দরকার। তা না হলে সংকট থেকেই যাবে।

নাম না প্রকাশের শর্তে নির্বাচন কমিশনের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর কমিশনের আস্থা বেড়েছিল। কিন্তু এরপর ১২৭টি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেই আস্থায় কিছুটা হলেও চিড় ধরেছে। কেননা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে একযোগে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এত বড় একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুষ্ঠুভাবে করা আর একটি–দুটি স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা এক নয়, এটা কমিশন বুঝতে পারছে। ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষ অবস্থান খুব জরুরি।

ইসি সূত্র বলছে, বছরের শুরুতে জানুয়ারির মাঝামাঝি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা আছে। ফেব্রুয়ারির শেষে দিকে ভোট গ্রহণ হতে পারে। এরপর এপ্রিলে-মে মাসে খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং বছরের মাঝামাঝি গাজীপুর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা আছে। আগস্টের পর আর কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চায় না কমিশন। মূলত আগস্ট থেকে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার পক্ষে তারা।

সূত্র বলছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী নভেম্বরে মাঝামাঝি বা শেষ দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা আছে। কমিশন চলতি বছরের শেষ দিকে ভোট অনুষ্ঠানের পক্ষে। সরকারি দলও চলতি বছরের ডিসেম্বরের ভোট গ্রহণ চায়। যদিও অন্য দল এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ মনে করেন, একটি সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কমিশন ভালোভাবেই কাজ করছে। লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে সেই অনুযায়ী সব কাজ এগোচ্ছে। তাঁর মতে, কমিশন সংবিধানের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন করবে। এখানে কমিশনের ওপর কারো কোনো চাপ থাকার সুযোগ নেই, নিয়ন্ত্রণ আরোপেরও সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ বলার মতো সময় এখনো আসেনি। এটি কমিশনের একেবারেই একক সিদ্ধান্তের ব্যাপার।