পাবনায় ছাত্রদল-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত ৩০

ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-ছাত্রদলের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশও পাল্টা রাবার বুলেট ছোড়ে। ১ জানুয়ারি, ২০১৮। ছবি: হাসান মাহমুদ
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-ছাত্রদলের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশও পাল্টা রাবার বুলেট ছোড়ে। ১ জানুয়ারি, ২০১৮। ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতা–কর্মীদের ধাওয়া–পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা করতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা শুরু হয়। পরে পুলিশ শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বিএনপি ও ছাত্রদলের ২৬ জন নেতা–কর্মীকে আটক করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদল নেতা–কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের জেলা বিএনপির কার্যালয়ে জমায়েত হতে থাকে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিছিলগুলো একত্রিত করে বড় শোভাযাত্রা করার প্রস্তুতি নেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিএনপি নেতা–কর্মীরাও এসে সমবেত হন। বেলা একটার দিকে তাঁরা শোভাযাত্রা নিয়ে কার্যালয় থেকে মধ্যশহর আবদুল হামিদ সড়কে আসার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়। এতে ছাত্রদল ও বিএনপি নেতা–কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে শোভাযাত্রা করার চেষ্টা করে। এতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে ছাত্রদল ও বিএনপি নেতা–কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে সংঘর্ষ বাধে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু করে। এতে পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন ছুটতে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিট সংঘর্ষ শেষে ছাত্রদল ও বিএনপি নেতা–কর্মীরা পিছুহটে। এ সময় পুলিশ জেলা বিএনপির কার্যালয় নিয়ন্ত্রণে নয়।

ঘটনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান জাফির ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিমেল রানাসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের প্রায় ২০ জন ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত ব্যক্তিদের পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক জানান, ছাত্রদল ও বিএনপি নেতা–কর্মীরা মারমুখী ছিলেন। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়। ঘটনায় নয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরে জনগণের জানমাল রক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যরা বাধ্য হয়ে ৪১টি শটগানের গুলি ও সাতটি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ওসি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ঘটনায় বিএনপি ও ছাত্রদলের ২৬ জন নেতা–কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিমেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পাঁচ দিন আগে শোভাযাত্রার অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করি। এরপরেও পুলিশ শোভাযাত্রায় বাধা দিয়ে লাঠিপেটা ও গুলি করে। এতে বিএনপি ও ছাত্রদলের কমপক্ষে ৫০ জন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা জেলা শহরের ও শহরের বাইরে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আছেন।

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার জিহাদুল কবীর বলেন, অনুমতি না নিয়ে ছাত্রদল শোভাযাত্রার নামে শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিল। তারা মারমুখী ছিল। এরপরেও সকাল থেকে মিছিল করতে দেওয়া হয়েছে। পরে বিশাল মিছিলের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার চেষ্টা করলে বাধা দেওয়া হয়েছে।