জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে শ্যামল শেখের তথ্য যাচাই চলছে

জঙ্গি নেতা শ্যামল শেখ ওরফে আবু সাঈদ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
জঙ্গি নেতা শ্যামল শেখ ওরফে আবু সাঈদ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বাংলাদেশে সিরিজ বোমা হামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও কলকাতার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি জঙ্গি নেতা শ্যামল শেখ ওরফে আবু সাঈদের দ্বিতীয় দফায় আবার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আবু সাঈদকে প্রথম দফায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার বগুড়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করে বগুড়া জেলা পুলিশ দ্বিতীয় দফায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। বিচারক শ্যামসুন্দর রায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নূর-এ আলম সিদ্দিকী মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দফা রিমান্ডে জঙ্গি আবু সাঈদ দুই বাংলায় জঙ্গি তৎপরতা ও তাঁদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শ্যামল শেখকে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি হিসেবে আবু সাঈদের বিরুদ্ধে কলকাতার এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছে। ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট বাংলাদেশে সিরিজ বোমা হামলায় আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেএমবির ওই নেতার পরিচয় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নথিতে শ্যামল শেখ হিসেবে লেখা রয়েছে। তিনি আবু সাঈদ ওরফে আবদুল করিম ওরফে তৈয়ব ওরফে তালহা শেখ ওরফে হোসাইন ওরফে সাজিদ ওরফে ডেঞ্জার সাকিল ওরফে মোকলেছ ওরফে শফিককে নামেও পরিচিত।

গত শুক্রবার রাতে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুরহাট এলাকায় বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক থেকে আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজশাহী থেকে মোটরসাইকেলে বগুড়ায় আসার পথে পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও বগুড়া পুলিশের যৌথ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। কলকাতা থেকে পালিয়ে আসার দুই বছরের মাথায় গ্রেপ্তার হলেন তিনি। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে একটি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলি, বার্মিজ চাকু ও নম্বরবিহীন মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।

আবু সাঈদের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চরচাঁদপুর গ্রামে। তাঁর হাত ধরে নব্য জেএমবি নেতা সোহেল মাহফুজসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করেছে।

এর আগে বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তারের আগে গত অক্টোবরে তাঁর স্ত্রী ও ভারতীয় নাগরিক খাদিজা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে আবু সাঈদকে ধরতে গোয়েন্দা দল মাঠে নামে। ২০০২ সালে উত্তরাঞ্চলে জেএমবিতে অভিষেক হয় আবু সাঈদের। রাজশাহী অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধানের দায়িত্ব পেয়ে বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা গ্রামে সর্বহারা নিধন অপারেশনে অংশ নেন। ২০০৫ সালে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা মামলার ঘটনায় নওগাঁর আদালতে বোমা হামলায় অংশ নেন তিনি।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বোমা হামলা মামলায় ২০০৭ সালে আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিলে ভারতে আত্মগোপন করেন তিনি। ২০০৯ সালে ভারতের খাদিজা বেগমকে বিয়ে করেন। ২০১০ সাল থেকে শ্যামল শেখ পরিচয়ে ভারতের নদীয়া জেএমবির সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে নদীয়া ছাড়াও বীরভূম ও বর্ধমান জেলায় দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে ভারতের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় বোমা বিস্ফোরণে অংশ নেন। এ ঘটনায় বর্ধমান পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে এবং আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ২০১৫ সালে আবু সাঈদ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ফের বাংলাদেশে এসে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি নব্য জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধানের দায়িত্ব পান।