'জান বাইর হয়া যাওছে'
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনেশ্বরী নদীর দুপাশে সাতটি গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের বাস। শীতে গরম কাপড়ের অভাবে এসব গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ কষ্টে আছে।
জেলেপাড়া গ্রামের সোম্বাই বেওয়া (৬০) বলেন, ‘ঠান্ডায় মুই কাবু হয়া গেছুন। জান বাইর হয়া যাওছে। হাত-পাও কোঁকড়া নাগোছে। ঘরোত জাম্পার-কম্বল কিছুই নাই। তোমরা মোক একনা কম্বলের ব্যবস্থা করি দেও।’
জেলেপাড়া গ্রাম ছাড়াও বালাপাড়া, মাছুয়াপাড়া, নদীপাড়, বুড়িরহাট, ডাঙ্গাপাড়া, মামুনপাড়া গ্রাম ঘুরে গতকাল শনিবার দেখা যায়, হতদরিদ্র মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এ সময় মাছুয়াপাড়া গ্রামের জিরো বালা (৭৫) বলেন, ‘রাইতোত এমনিতে শীতোত কাবু হয়া গেছি। তার ওপর নদীর ঠান্ডা বাতাস হু-হু করি বেড়ার ফাঁক দিয়া ঘরোত ঢোকে, তখন ছেঁড়া খ্যাতা গাওত দিয়া কোঁকড়া নাগি থাকি।’ একই গ্রামের জয়তী বালা (৬৫) বলেন, ‘কয় দিন থাকি রাইতোত খালি ঝড়ির মোতন কুয়া (কুয়াশা) পড়ে। এতে হাত-পাও বরফ হয়া টাটানি শুরু হয়। ঠান্ডার জন্যে ঘর থাকি বেড়া (বের হওয়া) যাওছে না।’
বালাপাড়া গ্রামের খয়রন বেওয়া (৬০) দুই নাতনিকে নিয়ে বাড়ির উঠানে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। খয়রন বলেন, ‘মনটা কওচে আগুন গাওয়োত নাগে দিয়া থাকোং। ঠান্ডা সহ্য হওচে না। ঘরের বাইরোতও যাওয়া যাওছেল না।’ ওই গ্রামের রাবেয়া বেগম (৭০) বলেন, ‘বাবা আকাশটা মনে হয় উনদাও হইছে। ঠান্ডায় আর বাঁইচপার পাইছি না। শরীর হিয়াল হয়া যাওছে। মোর গরম কাপড় নাই, কষ্টে আছুন। মেম্বারের গোরোত দুই দিন গেছনু, তা-ও কম্বল দেয় নাই।’
ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে যে ২৮-২৯টি কম্বল বরাদ্দ পেয়েছিলাম, তা দুস্থ লোকদের মধ্যে বিতরণ করেছি। এখেনো বালাপাড়া ও মাছুয়াপাড়া গ্রামে যে নয় শতাধিক হতদরিদ্র রয়েছে, তারা শীতবস্ত্রের জন্য সকাল-বিকাল আমার বাড়িতে ধরনা দিচ্ছে।’
সয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম বলেন, ডাঙ্গাপাড়া, বুড়িরহাট, মামুনপাড়া গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে আছে। তারা শীতবস্ত্রের জন্য ইউপিতে ভিড় করছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মাজেদুল ইসলাম বলেন, দুই দফায় সরকারিভাবে আড়াই হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব কম্বল জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরও কম্বলের জন্য জেলা প্রসাশকের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।