ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়!

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এক ব্যবসায়ীকে আটকের পর মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে দুই দফায় ৪৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ায় ওই ব্যবসায়ীকে পুলিশের স্থানীয় তথ্যদাতা (সোর্স) ভয় দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গত বুধবার রাতে দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদ বাজার থেকে নাহারুল ইসলাম নামের ওই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে দুই দফায় ৪৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, দৌলতপুর থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান ওই টাকা নিয়েছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে দেওয়া নাহারুল ইসলামের ভাষ্যমতে, বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে হোসেনাবাদ বাজারে একটি সেলুনে বসে ছিলেন নাহারুল। সাড়ে সাতটার দিকে চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য সেলুনে ঢোকেন। এরপর নাহারুলকে আটক করে তাঁকে হাতকড়া পরানো হয়। আটকের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ কিছু না বলে তাঁকে মোটরসাইকেলে তুলে দৌলতপুরের দিকে যেতে থাকে। পথে তারাগুনিয়া থানা মোড়ে থেমে নাহারুলকে মামলার ভয় দেখায় পুলিশ।
নাহারুল অভিযোগ করেন, থানা মোড়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে তাঁর কাছে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। তা না হলে ফেনসিডিল, ইয়াবা অথবা অস্ত্র দিয়ে মামলায় চালান দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে পুলিশ তাঁকে নিয়ে দৌলতপুর সড়কের পাশে স্বরূপপুর এলাকায় ব্র্যাক কার্যালয়ের সামনে যায়। তাঁকে স্বরূপপুর মাঠে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। এ সময় তিনি আবদুল খালেক নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে টাকা দিতে রাজি হন। পরে পুলিশ ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। তাঁর ছোট ভাই পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়ে ওই মাঠে যান। পুলিশ সদস্যদের টাকা দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নাহারুল ছাড়া পান। ওই রাতের ঘটনা কাউকে বললে পরে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। নাহারুল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবদুল খালেকের মাধ্যমে বাকি ১৬ হাজার টাকা পাঠান। এদিকে এ ঘটনার পর আতঙ্কে আছেন নাহারুল ইসলাম। পুলিশের স্থানীয় তথ্যদাতা বিভিন্ন সময় নাহারুলকে হুমকি দিচ্ছেন।
তবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ভেড়ামারা সার্কেল এএসপির নির্দেশে নাহারুলকে আটক করা হয়েছিল। তিনি মাদকের ব্যবসা করেন। পরে তাঁর কাছে কিছু না পেয়ে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’
কুষ্টিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) কামরুল হাসান বলেন, নাহারুল তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। এ জন্য তাঁকে ধরতে বলা হয়েছিল। তবে রাত আটটার দিকে এসআই জানিয়েছিলেন, তাঁর (নাহারুল) কাছে কিছু পাওয়া যায়নি। এ জন্য তাঁকে ছেড়ে দিতে বলা হয়। তবে রাত ১১টায় টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো কিছু জানা নেই। এমন কিছু হলে বা অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।