অন্যকে বাঁচাতে নিজের জীবনই বিপন্ন

দুর্ঘটনায় আহত মো. ছানাউল্লা
দুর্ঘটনায় আহত মো. ছানাউল্লা

মুঠোফোনে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়েই কনকনে শীত উপেক্ষা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের ঠাকুরদীঘি এলাকায় ছুটলেন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাঁচ সদস্য। তখন সকাল ছয়টা। কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারপাশ। এর মধ্যে যতটা দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেন তাঁরা। দুমড়েমুচড়ে যাওয়া একটি কাভার্ড ভ্যান কেটে বের করে আনেন ভেতরে আটকা পড়া চালককে।

হাসপাতালে নেওয়ার জন্য স্ট্রেচারে (শায়িত অবস্থায় স্থানান্তর করার ব্যবস্থা) তোলা হয় আহত চালককে। স্ট্রেচারটি নিয়ে সহকর্মীরা যাতে নিরাপদে পার হতে পারেন সে জন্য সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত তুলে গাড়ি থামার সংকেত দিতে থাকেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মো. ছানাউল্লা। কিন্তু সেই সংকেত উপেক্ষা করে দ্রুতগতির একটি ট্রাক ধাক্কা দিয়ে তাঁকে কয়েক মিটার দূরে টেনেহিঁচড়ে নেয়। থেঁতলে যায় তাঁর বাম হাত ও পা। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।

গতকাল রোববার সকালে অন্যের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে পা হারানোর শঙ্কায় পড়া ছানাউল্লার বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বগাচতল গ্রামে। ঘটনার পর ট্রাকটি ফেলে পালিয়ে যান চালক। পরে পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো. রবিউল আযম প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার ঠাকুরদীঘি এলাকায় মহাসড়কে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন তাঁর স্টেশনের ফায়ারম্যান ছানাউল্লা। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সহকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে তাঁকে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা ছানাউল্লাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁকে দুপুরেই ঢাকায় পাঠানো হয়।

এদিকে দুর্ঘটনায় আহত ওই কাভার্ড ভ্যানের চালক মো. জহিরের চিকিৎসা চলছে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সকালের প্রথম দুর্ঘটনার বিষয়ে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক একরামুল হক বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীকে চাপা দেওয়া ট্রাকটিকে জব্দ করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। এই ঘটনায় মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।