৪৫০ হোটেলের ছাড়পত্র নেই

কক্সবাজার শহরে গড়ে ওঠা ৪৫০টি হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস ও কটেজ চলছে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই। দুটি ছাড়া কোনোটিতে নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ‘সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ বা এসটিপি। পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া হোটেল পরিচালনার কারণ দর্শিয়ে গত এক মাসে শহরের ৩০৯টি হোটেল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ জবাব দেয়নি।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব প্রথম আলোকে বলেন, সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত এক বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যেই যেনতেনভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় ৭০০ বহুতল ভবন। ৩২ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে ভবন রয়েছে আরও ৩ হাজার ২০০টি। সৈকত ও শহর এলাকায় নির্মিত ৯০ শতাংশ হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস নির্মাণে পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।

সাইফুল আশ্রাব বলেন, ৪৬৫টি হোটেল-গেস্টহাউস কটেজের মধ্যে মাত্র ১৫টির পরিবেশ ছাড়পত্র আছে। এসটিপি আছে মাত্র দুটিতে। এসটিপি এবং পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া হোটেল পরিচালনার কারণ দর্শিয়ে গত এক মাসে শহরের ৩০৯টি হোটেল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ জবাব দেয়নি।

তিনি বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে অবশিষ্ট হোটেলগুলোতে নোটিশ পাঠানোর পর আইনগতব্যবস্থা নেবে পরিবেশ অধিদপ্তর।

গতকাল রোববার সকালে কলাতলীর অন্তত ৪৫টি হোটেল ও গেস্টহাউসে সরেজমিনে ঘুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো সুবিধা চোখে পড়েনি। হোটেল বর্জ্য সরাসরি চলে যাচ্ছে সমুদ্রে। ৯০ শতাংশ হোটেলে অপরিকল্পিতভাবে নলকূপ বসিয়ে তোলা হচ্ছে চাহিদার অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি।

কক্সবাজার কটেজ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহমেদ বলেন, তাঁদের সমিতিভুক্ত শতাধিক কটেজের কোনোটিতে পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এখন অনেকে আবেদন করেছেন। কিন্তু নানা জটিলতায় ছাড়পত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

কক্সবাজারে চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে কলাতলীর এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় নতুন করে আরও শতাধিক বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়েই বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা। ভবন তৈরির পর পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য চাপ দিলে পরিস্থিতি রাতারাতি পাল্টে যাবে না। তা ছাড়া অধিকাংশ হোটেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নেই। ফলে হোটেল বর্জ্য চলে যাচ্ছে সমুদ্রে। দূষিত হচ্ছে সমুদ্রের পানি। ব্যয়বহুল হওয়ায় এককভাবে কোনো হোটেলের পক্ষে এসটিপি নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। সৈকতের এক চিলতে জায়গায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বহুতল ভবন নির্মাণ করায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে পর্যটন শহর।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মমিনুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন তাঁরা বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। এর মধ্যে আছে হোটেল মালিকের নাম, হোটেল নির্মাণের তারিখ, বিনিয়োগের পরিমাণ, ভবনের আয়তন ও কক্ষসংখ্যা, ধারণক্ষমতা, বর্জ্যের ধরন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিবরণ, সেপটিক ট্যাংকের আয়তন ইত্যাদি।

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান বলেন, শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই শত শত বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কক্সবাজারকে রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।