অবৈধ তিন ভাটায় পুড়বে ইট

যশোরের কেশবপুর উপজেলার ভোগতী গ্রামে কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে জামান ইটভাটা।  সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
যশোরের কেশবপুর উপজেলার ভোগতী গ্রামে কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে জামান ইটভাটা। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ইটভাটার কার্যক্রম। উপজেলার ১০টি ইটভাটার মধ্যে ৭টির ছাড়পত্র নেই। এদিকে, নতুন করে আরও তিনটি ভাটায় ইট পোড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় রহমান ব্রিকস, আলম ব্রিকস ও কেশবপুর ব্রিকস সব ধরনের অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু খান ব্রিকস, গোল্ড ব্রিকস, রিপন ব্রিকস, বিএসবি ব্রিকস, বিবি ব্রিকস, এসএস ব্রিকস ও আর প্রাইম ব্রিকসের পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে ইউএনওর কার্যালয়ে ইটভাটার মালিকদের হাজির হয়ে কাগজপত্র উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ইটভাটার মালিকেরা কোনো সনদ দেখাতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোগতী গ্রামের জামান ব্রিকস, বারুইহাটি গ্রামে রোমান ব্রিকস ও সাতবাড়িয়া গ্রামে সুপার ব্রিকসে এই মৌসুমে ইট পোড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এগুলোর ছাড়পত্র দেয়নি। জেলা প্রশাসকেরও অনুমোদন নেই।

উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামে সুপার ব্রিকস গড়ে উঠেছে প্রায় দুই একর জমির ওপর। কৃষিজমিতে ভাটাটি তৈরি হয়েছে বলে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক, ইউএনও, পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইটভাটায় কয়েক শ মণ কাঠ জড়ো করা হয়েছে। এর সামনে সরিষাখেত। ডানপাশে বোরো ধান চাষ হচ্ছে। ইটভাটার ২০০ গজ দূরে সাতবাড়িয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। এর সামনেই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

ভাটার পেছনে ৫০ গজ দূরে শেখ রেজাউল ইসলামের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘এখানে ভাটার কার্যক্রম চলছে। আমরা কীভাবে বসবাস করব? আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।’

আবুল বাসার সরদার বলেন, ‘ভাটার পেছনে চার বিঘা জমিতে তাঁর পানের বরজ। এখানে ইটভাটা হলে বরজে কোনো পান উৎপাদিত হবে না। তখন আমাদের না খেয়ে মরে যেতে হবে।’

ভাটামালিক ফারুকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। তবে এখনো অনুমোদন পাইনি।’ তিনি স্বীকার করেন, এক ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরি হচ্ছে।

এদিকে বারুইহাটি গ্রামের কেশবপুর–চিংড়া সড়কের পাশে রোমান ব্রিকসের অবস্থান। ভাটার চারপাশেই কৃষিজমি। এ গ্রামের আবদুস সাত্তার বলেন, তিনি ১০-১২ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছেন। ইটভাটা হলে আশপাশের জমিতে ফসল উৎপাদিত হবে না। এই এলাকায় ফসল না হলে কৃষকদের বেঁচে থাকাই কষ্ট হবে। তিনি আরও বলেন, ইটভাটার বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন আন্দোলন গড়ে তুলছেন। গত ২৭ ডিসেম্বর ৫১ সদস্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

কৃষক নূর আলী বলেন, ইটভাটার বিরুদ্ধে কথা বলায় ভাটামালিক নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। মালিকপক্ষের লোকজন কৃষকদের মারধর করছেন। প্রশাসন ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করার আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ভাটামালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি যে জমিতে ভাটা করছি, সেটা কৃষিজমি নয়। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে ভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছি। খুব শিগগির লাইসেন্স পেয়ে যাব।’

যশোরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সুপার ব্রিকসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। ওই ইটভাটাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। আর রোমান ব্রিকস ও জামান ব্রিকস আবেদন করেনি। অনুমোদন ছাড়া ভাটা তৈরি করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দীন বলেন, ‘সম্প্রতি যশোরে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির কারণে অনেক কাজ আমরা করতে পারিনি। অনুমোদনহীন ভাটার বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’