ঘন কুয়াশায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে লঞ্চ-ট্রলার

ঘন কুয়াশার মধ্যে দুর্ঘটনা এড়াতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে নিষিদ্ধ করা হয় ছোট নৌযানের চলাচল। এরপরও বাড়তি লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে লঞ্চ ও ট্রলারে। গতকাল সকালের ছবি l প্রথম আলো
ঘন কুয়াশার মধ্যে দুর্ঘটনা এড়াতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে নিষিদ্ধ করা হয় ছোট নৌযানের চলাচল। এরপরও বাড়তি লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে লঞ্চ ও ট্রলারে। গতকাল সকালের ছবি l প্রথম আলো

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কুয়াশার ভেতর রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে নৌযান চলাচল করছে। কুয়াশায় অধিকাংশ সময় ফেরি বন্ধ থাকলেও বাড়তি আয়ের আশায় কিছু লঞ্চ ও ট্রলারে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। এতে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, কুয়াশার কারণে কিছুদিন ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পথে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এ সময় অন্য নৌযান চলাচলও বন্ধ রাখতে বলা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর চারটা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ ছিল।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই নৌপথে লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল করছে। গতকাল সকাল আটটার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চ ও ট্রলার ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে। এমনকি ১ নম্বর ফেরিঘাট ফাঁকা থাকায় পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি লঞ্চ ফেরিঘাটের পন্টুনের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। সেখানেও যাত্রীরা ওঠা-নামা করছেন। পাশের ৫ নম্বর ফেরিঘাটে কুয়াশার ভেতর গাড়ি বোঝাই করে চারটি ফেরি নোঙর করে থাকলেও ওই ঘাটেও একাধিক ট্রলার এসে পন্টুনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের তুলে নিচ্ছে।

ট্রলারচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘২৬টি ট্রলারের মধ্যে প্রতিদিন ১৩টি করে ট্রলার চলে। আজ (বৃহস্পতিবার) শিডিউলে আমার ডিউটি ছিল না। তবে বাড়তি টাকার আশায় ফেরিঘাটে ট্রলার লাগিয়েছি। সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত দুই ট্রিপে কয়েক শ টাকা আয় হয়েছে।’

সকাল সাড়ে আটটার দিকে ১ নম্বর ফেরিঘাটে পাটুরিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে আসা লঞ্চ মাস্টার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ফেরি বন্ধ থাকলেও ঘাটে থাকা পরিবহনের যাত্রীদের চাপাচাপিতে লঞ্চ ছেড়েছি। আমার আগে আরও দুটি লঞ্চ পাটুরিয়া থেকে এসেছে। একইভাবে দৌলতদিয়া থেকেও কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে।’ কুয়াশার কারণে সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুটা সমস্যা হলেও চলতে হয়।

ট্রলার ঘাটেও একই চিত্র দেখা যায়। ট্রলারচালক ও সহকারীরা যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ট্রলারমালিক টোকন ব্যাপারী বলেন, ‘জনপ্রতি ৫০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কুয়াশায় ফেরি বন্ধ থাকলেও আমরা কষ্ট করে হলেও যেতে পারি। তাই একটু ভাড়া বেশি নিচ্ছি। এ ছাড়া মোটরসাইকেল পার করতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে থাকি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর ভোর পৌনে ৬টা থেকে ফেরিসহ অন্য নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। তবে বাড়তি আয়ের আশায় কিছু লঞ্চ ও ট্রলারের মালিকেরা যাত্রী পারাপার অব্যাহত রাখেন। ঘাটে আটকে পড়া যাত্রীদের নিয়ে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এমভি মনিহার, শাপলা ফুল, নাবিল-৩, অনন্যাসহ বেশ কয়েকটি লঞ্চ মাঝনদীতে গিয়ে দিক হারিয়ে ফেলে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর কুয়াশা কেটে গেলে লঞ্চগুলো ঘাটে পৌঁছায়। এর আগের দিন দুটি ট্রলার রাতে কুয়াশার কবলে পড়ে মাঝনদীতে চরে আটকে পড়ে। ট্রলার দুটির যাত্রীদের চরে নামিয়ে দেওয়া হয়।

লঞ্চের কয়েকজন মাস্টারসহ চালক বলেন, ‘অনেক সময় যাত্রীদের চাপে ও মালিকের সিদ্ধান্তে বাধ্য হয়ে লঞ্চ চালাতে হয়। তবে ঘন কুয়াশায় চালাই না। অনেক সময় দিক হারিয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গন্তব্যে পৌঁছে যাই।’

মালিকদের চাপে লঞ্চ চালানোর কথা অস্বীকার করে আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নৌযান চালানোর কথা শুনেছি। এ বিষয়ে ৫ ডিসেম্বর সভা ডেকে কুয়াশার ভেতর লঞ্চ চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। এরপর কেউ চালালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) ফরিদুল ইসলাম বলেন, কুয়াশার মধ্যে লঞ্চ-ফেরি চলার কথা নয়। মাঝেমধ্যে হালকা কুয়াশা দেখে ঘাট থেকে ছেড়ে গেলে লঞ্চ মাঝনদীতে আটকা পড়ে। এ রকম পরিস্থিতিতে লঞ্চ না চালাতে মালিক সমিতিকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। ট্রলারগুলো চলে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। এ জন্য নৌপুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।