প্রধানমন্ত্রী সংকটের দিকে ঠেলে দিলেন: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে ‘জনগণ হতাশ’ হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী জাতিকে আরেক দফা সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন নিয়ে কোনো রকম নৈরাজ্য সহ্য হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী হুমকির সুরে কথা বলেছেন।

সরকারের চার বছর পূর্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এই ভাষণের পর রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন। কাল শনিবার বিকেল তিনটায় বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশে এখন রাজনৈতিক সংকট চলছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কীভাবে নির্বাচন অর্থবহ করা যায়, তা নিয়ে কিছু বলেননি। দুঃখজনকভাবে তাঁর বক্তব্যে সংকট নিরসনের কোনো লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে সত্যতার মিল নেই।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যে সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার, তার আয়োজনে সরকার আন্তরিক নয়। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জনগণ আশাহত হয়েছে।

দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে—প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রকৃতপক্ষে দেশ দুর্নীতির মহাসড়কে আছে। উন্নয়নের নামে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের কথা বলেছেন। কিন্তু বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলায় সে সংকট রয়ে গেল। দেশের মানুষ অর্থবহ নির্বাচন দেখতে চায়। তাঁর বক্তব্যে সমঝোতার ইঙ্গিত দেখা গেল না। এটা হতাশাজনক। মানুষ এ অন্যায় সহ্য করবে না।

নির্বাচন নিয়ে কোনো রকম নৈরাজ্য সহ্য হবে না—প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য এক ধরনের হুমকি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি হুমকির সুরে এ কথা বলেছেন। আমরা বলতে চাই, নৈরাজ্য বিরোধী দল সৃষ্টি করে না। নৈরাজ্য সরকার করে। বিগত সময়ে তারাই নৈরাজ্য করেছিল, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।’

জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। এই কমিশন ইতিমধ্যে ২টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কিছু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় জনগণের আস্থা অর্জন করেছে।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর জোট সরকারের সময় নানা নেতিবাচক ঘটনা তুলে ধরেন। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে দলদুটির আগুন সন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করেন।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। ওই সময় নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েও আন্দোলনে ব্যর্থ হয় দলটি। পরে ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীনদের অবৈধ আখ্যা দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন করেও দলটি ব্যর্থ হয়। এখনো দলটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার দাবিতে আন্দোলন করছে।