সরকারের সাড়া নেই

আট দিন লাগাতার অবস্থান ও পাঁচ দিন ধরে আমরণ অনশনে অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে। এক মাদ্রাসাশিক্ষক স্যালাইন নিয়েই অনশন করছেন। পাশে ক্লান্ত অন্য শিক্ষকেরা শুয়ে আছেন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। প্রথম আলো
আট দিন লাগাতার অবস্থান ও পাঁচ দিন ধরে আমরণ অনশনে অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে। এক মাদ্রাসাশিক্ষক স্যালাইন নিয়েই অনশন করছেন। পাশে ক্লান্ত অন্য শিক্ষকেরা শুয়ে আছেন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। প্রথম আলো

খোলা আকাশ, কনকনে শীতের মধ্যেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতে শুয়ে বা বসে আছেন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে পরিচিত শিক্ষকেরা। এভাবেই কাটছে দিন-রাত। যদিও দাবি আদায়ে এই অনশন ও অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া নেই।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুই ধরনের শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধন পাওয়া সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ওই সব মাদ্রাসার শিক্ষকেরা ১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবস্থানের পর ৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন করছেন। গতকাল শনিবার ছিল অনশন কর্মসূচির পঞ্চম দিন। এদিন বেলা আড়াইটা পর্যন্ত নতুন করে আরও ১৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে গত পাঁচ দিনে ১৩৩ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

আর শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল চতুর্থ দিনের মতো লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের ডাকে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

গতকাল বেলা সোয়া দুইটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসাশিক্ষকদের বেশির ভাগই শীতের কাপড় গায়ে দিয়ে রাস্তা ও ফুটপাতে শুয়ে আছেন। ওপরে শামিয়ানাও নেই। ফলে শীতের কষ্টটা বেশি হচ্ছে। এর মধ্যে অসুস্থ অনেকে স্যালাইন নিয়েই শুয়ে আছেন। সহকর্মীরাই তাঁদের সেবা-শুশ্রূষা করছেন।

চার দিন ধরে আমরণ অনশনে রয়েছেন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা। বলছিলেন, তাঁদের মাদ্রাসাটি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। নিবন্ধিত হয়েছে ১৯৮৫ সালে। বর্তমানে চারজন শিক্ষক। কিন্তু সরকার থেকে কেউ কোনো বেতন-ভাতা পান না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, এখনো সরকারের তরফ থেকে কোনো সাড়া নেই। তাই মরলেও এখানেই থাকবেন। দাবি পূরণ ছাড়া এবার বাড়ি যাবেন না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দেশে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সংখ্যা ৩ হাজার ৪৩৩টি। এগুলোতে শিক্ষক আছেন ১৫ হাজার ২৪৩ জন। মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৫১৯টির ৪ হাজার ৫২৯ জন শিক্ষককে অনুদান হিসেবে মাসে কিছু টাকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকেরা পান মাসে আড়াই হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকেরা পান মাসে ২ হাজার ৩০০ টাকা। বাকিরা পান না।

তবে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা বলছেন, মাদ্রাসা বোর্ড থেকে নিবন্ধিত ১৮ হাজার ১৯৪টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার মধ্যে চালু আছে ১০ হাজারের মতো।

জানতে চাইলে মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের নতুন প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মাদ্রাসাশিক্ষকদের দাবির বিষয়টি নিয়ে তিনি আজ (রোববার) আন্দোলনকারী শিক্ষকনেতাদের ডেকে কথা বলবেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও কথা বলবেন। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ জানাবেন।

এমপিওভুক্তদের আমরণ অনশন কাল থেকে

প্রেসক্লাবের মূল ফটকের পূর্ব পাশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরা শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আগের ঘোষণা অনুযায়ী, আজ রোববার থেকে তাঁদের আমরণ অনশনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা এক দিন পিছিয়েছে।

 বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। আজ বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত থাকায় আগামীকাল সোমবার থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু হবে।

শিক্ষা জাতীয়করণের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন এই শিক্ষকনেতা বলেন, বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থী আছে। এদের বেতন বাবদ মাসে প্রতি শিক্ষার্থীর গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হয়। জাতীয়করণ হলে সরকারি নিয়মে মাসে ২০ থেকে ৫০ টাকার মতো খরচ হবে। এতে ওই সব শিক্ষার্থীর পরিবারের খরচ কমে সাশ্রয় হবে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া কমবে। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনবৈষম্যও দূর হবে।

১০ জানুয়ারি থেকে অবস্থান কর্মসূচিতে আছেন পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার পূর্ব আলীপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জাকির হোসেন। এখানে চলে আসায় বিদ্যালয়ের পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে কি না—জানতে চাইলে এই শিক্ষকের দাবি, অন্য শিক্ষকেরা আছেন। তিনি বললেন, দাবি পূরণ না হলে তিনি এখান থেকে যাবেন না।