'বিড়ম্বনার শিকার' শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের ডাক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের চারপাশের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের চারপাশের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্ত বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কারণে তাঁদের পরিচয়সহ নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।

আজ রোববার সকালে অপরাজেয় বাংলার সামনে বিক্ষোভ, প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও ও দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের চারপাশের রাস্তা অবরোধ করে এই দাবি জানান। ঘণ্টাখানেক অবরোধ শেষে তাঁরা কাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বর্জনের ডাক দিয়ে অবরোধ তুলে নেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। শাহবাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে ঢাকা মেডিকেলগামী একাধিক অ্যাম্বুলেন্স যানজটে আটকে থাকতে দেখা গেছে।

একই দাবিতে গত বৃহস্পতিবারও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছিলেন। বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ গ্রুপে একটি ইভেন্ট খোলা হয়। এতে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের অধিভুক্ত বাতিলের দাবি জানাতে জড়ো হন। ওই ইভেন্টের ক্রিয়েটর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘সাত কলেজের অধিভুক্তের পর থেকে শিক্ষার্থীদের পরিচয় নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শাখায় পড়ি। তাঁরা ধরেই নিচ্ছেন, একেকটা কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেকটা শাখা।’

মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সাত কলেজের অধিভুক্তের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার চরম অবনতি ঘটছে। সাত কলেজের দেড় লাখ শিক্ষার্থীর জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা, উত্তরপত্র দেখা, সাক্ষাৎকার নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়তই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের সমস্যাগুলো নিয়ে ফেসবুকে কথা বলছেন। টিউশন পাওয়ার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সবকিছুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অবমাননাকর।

সাত কলেজের বাইরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্দির রহমান বলেন, ‘ওগুলো নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কলেজগুলো নিজেদের নামেই চলছে। নিজেরাই প্রশ্ন প্রণয়ন বা ভাইভা নিচ্ছে। কিন্তু সাত কলেজের সব কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের করতে হয়। ফলে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কাজ করতে গিয়ে তাঁরা অনীহা দেখাচ্ছেন। সিলেবাস শেষ হচ্ছে না। ক্লাসের শিডিউল মিস হচ্ছে।’

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে অপরাজেয় বাংলার সামনে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ শিক্ষার্থী। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়। শিক্ষার্থীরা ‘বাতিল হোক অধিভুক্ত, ঢাবি হোক বহিরাগতমুক্ত’, ‘সাত কলেজ মুক্ত ঢাবি, হাজারো শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি’, ‘এক দফা এক দাবি, অধিভুক্ত মুক্ত ঢাবি’, ‘সাত কলেজ বেমানান, রাখতে ঢাবির সম্মান’, ‘অধিভুক্ত মুক্ত কর, ঢাবির মান রক্ষা কর’, ‘আমরা শুধু আমরাই, অন্য কারও ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন।

পরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় কার্যালয়ের ফটক বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীরা বাইরে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে উপাচার্য এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, সাত কলেজের যেসব কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে সেগুলো চলবে না।

কিন্তু উপাচার্যের বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা আশ্বস্ত না হয়ে বেলা দেড়টার দিকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের দিকে যান। সেখানে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পরে রাস্তায় বাঁশ ফেলে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেন। কয়েকজন রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাত কলেজের অধিভুক্ত বাতিলের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকেল পৌনে তিনটা পর্যন্ত এই অবরোধ চলে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপ কমানোর অংশ হয়েছে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ফেসবুকে এর বিরোধিতা শুরু করে।