হালদার চরে কোটি টাকার সবজি

হালদা নদীর চরে সবজি চাষে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকেরা। গতকাল সকালে ফটিকছড়ির নাজিরহাট চর এলাকায় l প্রথম আলো
হালদা নদীর চরে সবজি চাষে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকেরা। গতকাল সকালে ফটিকছড়ির নাজিরহাট চর এলাকায় l প্রথম আলো

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীর বুকে পাঁচটি বড় চর। নাজিরহাট, কুম্ভারপাড়া, ধুরুং, নাইচ্যারঘাট ও ব্রাহ্মণহাট। এসব চরের দেড় শ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, মুলা, বরবটি, বেগুন, শিম, টমেটো এসব সবজির চাষ হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের হিসাবে এখানে উৎপাদিত সবজির বাজার মূল্য তিন কোটি টাকার মতো। অন্তত এক হাজার কৃষক লাভবান হচ্ছেন এখানকার সবজি চাষ থেকে।

দৌলতপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তাজুদ্দীন বলেন, চরের প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ টন সবজি উৎপাদিত হয়। যার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। সে হিসাবে ১৫০ হেক্টর জমিতে দেড় হাজার টন সবজি উৎপাদিত হয়। যার বাজার মূল্য তিন কোটি টাকারও বেশি।

কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯১ সালের আগে হালদার তীরের এসব এলাকায় জনবসতি ছিল। বিভিন্ন সময়ের বন্যায় বিলীন হয়ে যায় জনবসতি। গত এক দশক ধরে এসব এলাকায় এখন জেগে উঠেছে নতুন চর। এসব চরে সবজি আবাদ করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন অন্তত এক হাজার চাষি।

মুহাম্মদ তাজুদ্দীন বলেন, প্রতিবছর হালদার ঢলে অনেক জমি পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানির সঙ্গে আসা পলি জমে হালদার চরে। ফলে চরের মাটির উর্বরতা বাড়ে প্রতিবছর। এতে কৃষক বেশ লাভবান হন, সবজির ফলনও ভালো হয়।

ব্রাহ্মণহাট গ্রামের কৃষক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, চরে সবজি চাষে খরচ খুবই কম। সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা সবজি চাষে বেশি বিনিয়োগ করেন। ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, মুলা, বরবটি, বেগুন, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ, ধনেপাতা এসব সবজির চাষই বেশি হয় এখানে।

নাইচ্যারঘাট এলাকার কৃষক মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন এক একর জমিতে সবজি চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ফলন পেয়েছেন ১৩০ মণ। যার বাজার মূল্য দেড় লাখ টাকা। জমিতে তেমন সার প্রয়োগ করতে হয়নি। আরও প্রচুর সবজি পাবেন বলে আশা তাঁর। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারেও সরবরাহ করা হচ্ছে।

নাজিরহাট বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. নাছির উদ্দিন বলেন, প্রতি সপ্তাহে কুম্ভারপাড়া এলাকা থেকে তিনি প্রায় এক-দেড় লাখ টাকার সবজি কিনে বাজারে বিক্রি করেন। এতে বেশ লাভও হয় তাঁর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লিটন দেব নাথ বলেন, চরে ১৫০ হেক্টর জমিতে বিপুল সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এলাকার কৃষকদের ভাগ্য বদলের জন্য কৃষি কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।