আরও একজনের পরিচয় মিলেছে, বাড়ি চট্টগ্রাম

ঢাকায় নাখালপাড়ায় র‍্যাবের অভিযানে নিহত তিনজনের মধ্যে আরও একজনের পরিচয় মিলেছে। র‍্যাবের গণমাধ্যমে পাঠানো ছবি দেখে একজনের বাবা নিশ্চিত করেছেন তার সন্তান একজন। সে নিখোঁজ ছিল। তার নাম মো. নাফিস উল ইসলাম (১৬)।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রামের চকবাজার থানার প্যারেড মাঠ সংলগ্ন নিজের মুদি দোকানে র‍্যাবের পাঠানো ছবি দেখে প্রথম আলোকে তিনি তার সন্তানকে চিহ্নিত করেন। তবে তিনি ছেলের লাশ চট্টগ্রামে আনবেন না বলে জানান।

এ কিশোরকে খুঁজতে গিয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ নগরের সদরঘাট এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছিল।

রাজধানীর নাখালপাড়ার ‘রুবি ভিলা’ নামের ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযান চালায় র‍্যাব। এতে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির তিন সদস্য নিহত হন। তাঁদের মধ্যে মেজবাহ উদ্দীন নামের একজনের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেছে র‍্যাব। বাকি দুজনের পরিচয় পাওয়া না গেলেও তাঁদের ছবি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে।

‘কিশোরকে খুঁজতে গিয়ে ধরা পড়ল আত্মঘাতী জঙ্গি’ শিরোনামে ৪ জানুয়ারি প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

নাফিসের বাবা নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে র‍্যাবের পাঠানো ছবি দেখে শনাক্ত করেন দুজনের মধ্যে একজন তার ছেলে। গোয়েন্দা পুলিশকেও তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তার লাশ চট্টগ্রামে আনব না।’ কেন আনবেন না সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।

র‍্যাবের অভিযানে নিহত তিন যুবকের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম থেকে নিখোঁজ হওয়া নাফিস বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের প্রধান এ এ এম হুমায়ুন কবির।

গত বছরের ৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. নাফিস উল ইসলাম নিখোঁজ হয়। সেদিন দুপুরে নামাজ পড়তে যাওয়ার কথা বলে সে ঘর ছাড়ে। এ ঘটনায় তার বাবা নগরের চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।

নাফিসকে খুঁজতে গিয়ে পুলিশ একটা সময় জানতে পারে, সে নব্য জেএমবির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ১ জানুয়ারি মধ্যরাতে সদরঘাট এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে দুই জঙ্গি মো. আশফাক ও মো. রাকিবুল হাসান ওরফে সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী ওরফে জনিকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তাঁদের কাছে ১০টি গ্রেনেড এবং দুটি সুইসাইড ভেস্ট (আত্মঘাতী বন্ধনী) উদ্ধার করে পুলিশ। তবে ওই বাসায় নাফিস ছিল না। তারাই পুলিশকে জানায় নাফিস ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একটি বাসায় আছেন। তার সাংগঠনিক নাম আবদুল্লাহ। কিন্তু সে সময় পুলিশ তাঁর খোঁজ পায়নি।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে ছয়তলা ভবন ‘রুবি ভিলার’ পঞ্চম তলায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে অভিযান চালায় র‍্যাব। এরপর একটানা প্রায় ৪০ মিনিট গোলাগুলি হয় বলে আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। পরদিন শুক্রবার সকালে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান ‘জঙ্গি আস্তানায়’ তিনজন নিহত হওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

ওই বাড়িটি পশ্চিম নাখালপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১০০ গজের মতো দূরে। সাংসদদের সরকারি বাসভবন বা ন্যাম ভবনের কাছেই এটি।

শুক্রবার জঙ্গি আস্তানাটি পরিদর্শন শেষে র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তিন যুবকেরই বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। চলতি মাসের ৪ তারিখ তাঁরা বাড়িটি ভাড়া নেন। নিহত তিনজনই জঙ্গি। অভিযান চলাকালে তাঁরা গ্যাসের চুলায় গ্রেনেড রেখে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। ওই জঙ্গি আস্তানার ভেতরে পাওয়ার জেল, সুইসাইড ভেস্ট ও বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে। অবিস্ফোরিত আইইডি ছিল বলে জানান র‍্যাবের মহাপরিচালক।

গত রোববার রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় নিহত তিনজনের মধ্য একজনের পরিচয় মেজবাহ উদ্দীন বলে জানায় র‍্যাব। তাঁর বাবা এনামুল হক। মা তাহমিনা আক্তার। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে। এ ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয় তেজগাঁও থানায়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেজবাহ উদ্দীনের মা-বাবা, স্ত্রী ও ভাইকে ঢাকায় আনা হয়।