নগরে খেজুর রসের মেলা

মাটির গ্লাসে রস পান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে রসের মেলার উদ্বোধন করেন অতিথিরা l ছবি: প্রথম আলো
মাটির গ্লাসে রস পান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে রসের মেলার উদ্বোধন করেন অতিথিরা l ছবি: প্রথম আলো

আলপথে চলতে চলতে শিশিরে ভিজে যাওয়া পায়ের পাতা। সন্ধে হলেই গাছে গাছে বাঁধা হচ্ছে হাঁড়ি। সকাল হতে না হতেই খেজুর রসের চেনা স্বাদে মাতোয়ারা। বাড়ির উঠান বা ধান কেটে নেওয়া শূন্য মাঠে গোল হয়ে বসে সেই রস আস্বাদন-এ দৃশ্যগুলো অনেকেরই চেনা। তবে ইট-পাথরের এই নগরে এ দৃশ্যের দেখা মেলা কঠিন। 

কোথায় খেজুরের রস পাওয়া যায়? নগরে জেঁকে বসা শীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাগরিকদের যেন স্লোগান হয়ে গেছে এই প্রশ্ন। ফেলে আসা গ্রামের স্মৃতিজাগানিয়া খেজুরের রসের স্বাদ নিতে যাঁরা ব্যাকুল ছিলেন, গতকাল শুক্রবার সকালটা ছিল তাঁদের জন্য। খেজুরের রসের সঙ্গে মুড়ি দিয়ে জমিয়ে সকালের নাশতা সেরেছেন তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়। আরও ছিল খই আর খেজুরের গুড়।
সপ্তমবারের মতো সাংস্কৃতিক সংগঠন রঙ্গে ভরা বঙ্গ আয়োজন করে এ রস মেলার। প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সচিব আক্তারী মমতাজ, কোরিয়ান উন্নয়ন সংস্থা কোইকার কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্যারি হিউনগু, বাংলা একাডেমির ফোকলোর বিভাগের পরিচালক শাহিদা খাতুন ও ইউডার চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ।
হায়াৎ মামুদ বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে এখনো খেজুর রসের উৎসব হয়। আমার মনে পড়ে, শীতের মৌসুমে আমরা চুরি করে রস খেতে যেতাম। আমরা এই উৎসবে এসে ফেলে আসা শৈশবের কথা স্মরণ করি। এ উৎসবে আসুন সকলে মিলে গ্রামের জন্য মঙ্গল কামনা করি, গ্রামগুলো যেন ভালো থাকে।’
আক্তারী মমতাজ বলেন, রস উৎসব মনে করিয়ে দেয় পুরোনো স্মৃতি। রস উৎসব মনে করিয়ে দেয় বাঙালির রসবোধের কথা।
রসের মেলায় আসা সবাইকে খেজুরের রস, খেজুরের গুড়, খই ও মুড়ি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। শুকনো পাতা দিয়ে তৈরি বাটিতে খেজুর গুড় ও খই-মুড়ি খেতে খেতে নানা রসবোধে মেতেছিলেন অনেকেই। তাঁদের সে রসবোধকে আরও মিঠে করে তোলে পোড়ামাটির গ্লাসে কুয়াশামাখা খেজুর রসের মিঠে স্বাদ। মাটির গ্লাসে আসা খেজুর রসে চুমুক দিতেই কজন হাপিত্যেশও করলেন-‘কোথায় গেল সেই শৈশব!’
রাজধানীর মেরাদিয়া এলাকা থেকে সকালেই সস্ত্রীক এসেছিলেন এস এম মুন্না। তিনি বলেন, ‘এখানে এসে বহু বছর পর খেজুরের রসের স্বাদ পেলাম।’
উৎসবে সংগীত পরিবেশন করেন জনি বয়াতি ও তাঁর দল। তাঁরা গেয়ে শোনান ‘বন্ধু আমার হাওয়াই মিঠাই’ ও ‘বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি’।