আগে সরষের ভূত ছাড়ান

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এসএসসি পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে প্রথম আলো ফেসবুকের পক্ষ থেকে পাঠকের মতামত চাওয়া হয়েছিল। তিন ঘণ্টার মধ্যে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার পাঠক তাঁদের অভিব্যক্তি জানিয়েছেন। বেশির ভাগ পাঠকই মনে করেন, এটি খুব বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নয়।

নাবিল মোহাম্মাদ জাভেদ লিখেছেন, ‘নিজের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেওয়ার মানুষ অনেক সময় নানা পন্থা অবলম্বন করেন। এটাও এর বাহিরে নয়। এটা হাস্যকর একটা উপায় বাতলেছেন।’
এম এইচ মেহেদি লিখেছেন, ‘তাতে কী! এমএমএস, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ছাড়াও অনেক মাধ্যম আছে প্রশ্ন ছড়ানোর। আগে সরষের ভূত ছাড়ান, না হলে এসব করে মানুষের গালি ছাড়া কিছুই অর্জন করতে পারবেন না। জাপানে শুধু বানান ভুল হওয়ার কারণে মন্ত্রী অভিযোগ কাঁধে নিয়ে দুঃখের সহিত পদত্যাগ করেন! আর এ দেশে!’

নাজমুল হাবিব সোয়ান লিখেছেন, ‘ধরুন, প্রেস থেকেই যদি প্রশ্ন ফাঁস হয়, তাহলে কি প্রেসই বন্ধ করে দিবেন? কোনো শিক্ষক বা কোনো কর্মকর্তা যদি প্রশ্ন ফাঁস করেন, তাঁকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে ও কঠিন সাজার আইন করতে হবে। এবং সে আইন যেন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়, সে জন্য সরকারের ও মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা থাকলে ও কঠোর হলে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো অসাধ্য কিছু না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নজরদারি ও বিচারের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন অনেক পাঠক। কেউ কেউ ফেসবুক কাজে লাগিয়ে সমস্যাটির সমাধানের কথা বলেছেন।

ইমতিয়াজ রাসেল লিখেছেন, ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে! মাননীয় মন্ত্রী, আগে নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের সামলান, আশা করি প্রশ্নপত্র ফাঁস অনেকটাই রোধ হবে। ফেসবুক বন্ধ করে পাবলিককে যন্ত্রণা দেওয়ার দরকার কী? আর প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে পাপ আর গলদ আসলে কোথায়, তা দেশবাসী ইতিমধ্যে জেনে গেছে। কাজী তৌফিক ওমর মনে করেন, ‘সরকারের ভুল সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে এটাও একটা! ফেসবুক বন্ধ রেখে নয়, বরং ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা যায়, সে সম্পর্কে ভাবা উচিত। এ রকম করা যায়—কোথায় কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, তার ছবি, তথ্য যে কেউ ইচ্ছা করলেই খুব সহজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারবে এবং সেখানে সার্বক্ষণিক মেসেজগুলো চেক করা হবে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে এসব খতিয়ে দেখতে হবে।’
মো. মোজাক্কিরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ফেসবুকের মতো একটি সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করলে প্রশ্ন ফাঁস রোধ হবে না। তখন হয়তোবা প্রশ্ন ফাঁস ঠিকই হবে, কিন্তু আমরা প্রতিবাদ জানাতে পারব না।’
বন্ধ রাখলেও বিকল্প উপায়ে ফেসবুক ব্যবহার করা যায়—এটা জানিয়ে আর এস রাফি লিখেছেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় বুঝি জানেন না, যুবসমাজ দেশে ফেসবুক বন্ধ কিরে দিলেও ফেসবুক চালাতে পারে। এই সব না করে প্রকৃত কারণ খোঁজেন, গড়িমসি না করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুন। মাননীয় মন্ত্রী, আপনি তো বলেছিলেন আপনি এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময়ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। তাহলে তখন কি ফেসবুক ছিল?’ সাব্বির বিশ্বাস লিখেছেন, ‘কোনো লাভ হবে না এতে। প্রশ্ন ফাঁস হলে সেটা বিভিন্নভাবেই প্রকাশ করা সম্ভব। ফেসবুক, টুইটার তো মামুলি ব্যাপার।’

আবদুর রাজ্জাক লিখেছেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করার জন্য এটা করা হচ্ছে না, বরং প্রশ্নপত্র যে ফাঁস হয়েছে—এটা যেন আপামর জনসাধারণ না জানতে পারে, সে জন্যই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।’