কয়লা তুলতে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির জন্য অপেক্ষা করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

দেশের খনিসমূহে মজুত কয়লা বিপুল পরিসরে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ (লাগসই) প্রযুক্তির জন্য অপেক্ষা করা হবে। এখন অগ্রাধিকার দেওয়া হবে খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষিজমি সংরক্ষণের ওপর।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়লাসম্পদ নিয়ে এই নীতিনির্ধারণী নির্দেশনা দেন। এর আলোকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রক্রিয়া দ্রুততর করার কথা বলেন তিনি। এলএনজি আমদানির দায়িত্ব দেন পেট্রোবাংলার ওপর।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সচিবালয়ের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন এবং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নীতিসংশ্লিষ্ট বক্তব্য দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে তাঁদের স্পষ্ট ধারণা হয়েছে, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বিপুল পরিসরে দেশের কয়লা তোলার আশু পরিকল্পনা সরকারের নেই। সভায় কয়লানীতি নিয়েও আলোচনা হয়নি।
দু-তিন দিন ধরে কোনো কোনো মহলে আলোচনা ছিল, সরকার শিগগিরই কয়লানীতি অনুমোদন করবে এবং কয়লা তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এর ওপর ভর করে লন্ডনে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী খনি থেকে কয়লা তোলার জন্য বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি লাভের অপেক্ষায় থাকা বিতর্কিত ব্রিটিশ কোম্পানি জিসিএম রিসোর্সেস লিমিটেডের শেয়ারমূল্য ও লেনদেন গত বুধবার অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যায়। কোম্পানিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশে কয়লানীতি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের জল্পনাই হচ্ছে এর সম্ভাব্য কারণ। তবে বুধবারের লেনদেন শেষে কোম্পানির এক ঘোষণায় বলা হয়, এই মূল্য ও লেনদেন বৃদ্ধির কোনো কারণ তাদের জানা নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর আবার কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, ঢাকায় কয়লা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিনির্ধারণী বক্তব্যের সঙ্গে এর যোগসূত্র থাকতে পারে। 
বুধবার লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের বিকল্প বিনিয়োগ বাজারে (অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেট) এআইএমের লেনদেন বন্ধ হওয়ার সময় জিসিএমের শেয়ারপ্রতি মূল্য ৭২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৫০ পেন্স। যদিও সকালে লেনদেন শুরুর সময় প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১৬ দশমিক ০৭ পেন্স। এদিন মোট ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৫২টি শেয়ারের হাতবদল ঘটে। একপর্যায়ে শেয়ারের দাম দ্বিগুণেরও বেশি (৩৩ পেন্স পর্যন্ত) উঠেছিল।
বৃহস্পতিবার সকালেও লেনদেনে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও চাহিদা অব্যাহত থাকে। দশ পেন্স অভিহিত মূল্যের এই শেয়ার লন্ডনে বাজার খোলার প্রথম দুই ঘণ্টার মধ্যে আগের দিনের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৪৪ পেন্সে পৌঁছায়। এর পর থেকে দরপতন শুরু হয়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (বাজার বন্ধ হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে) জিসিএমের শেয়ারের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১৯.৫০ পেন্সে এবং ৫১ লাখ ৭১৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
এআইএমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর কোম্পানিটি লোকসান দিয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জিসিএমের বার্ষিক সাধারণ সভায় আরও লোকসান ও নতুন শেয়ার ছাড়ায় আশানুরূপ পুঁজি সংগৃহীত না হওয়ার হতাশা প্রকাশ পেয়েছিল।
ভূতপূর্ব এশিয়া এনার্জি তার নাম পরিবর্তন করে কয়েক বছর যাবৎ জিসিএম রিসোর্সেস নামে কাজ করছে এবং ইতিমধ্যে কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় একাধিকবার পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। জিসিএম রিসোর্সের একমাত্র প্রকল্প বাংলাদেশের ফুলবাড়ী কয়লা খনি। এই কয়লা তোলার দায়িত্ব অসম চুক্তির ভিত্তিতে বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া এবং উন্মুক্ত পদ্ধতিতে তা তোলার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের বিক্ষোভে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছিল।
ঢাকায় গতকালের সভায় দেশের ‘কয়লা ব্যবহারে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির জন্য অপেক্ষা’ বলতে প্রধানমন্ত্রী কী বোঝাতে চেয়েছেন, জানতে চাইলে সভার সূত্র বলে, তিনি ‘আন্ডারগ্রাউন্ড কোল গ্যাসিফিকেশনের (ইউসিজি)’ কথা বুঝিয়েছেন বলে তারা মনে করে। এই প্রযুক্তি যে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু করা যায়নি, পরীক্ষামূলক প্রকল্পের পর্যায়েই রয়েছে—প্রধানমন্ত্রী সেটা জানেন বলেই এটাকে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটা ইঙ্গিত করছে, দেশে আপাতত উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হচ্ছে না।
সভায় অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ লাইন টেনে গ্যাস চুরি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকার বিষয়টিকে গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখছে বলেও সভার সূত্রগুলো জানায়। সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু গণমাধ্যম সেগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরতে কার্পণ্য করে। দুর্বলতাগুলো বিশেষভাবে প্রকাশেই তাদের আগ্রহ বেশি।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাঁর সরকারের সাফল্যের তথ্যও তুলে ধরেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎসচিব মনোয়ার ইসলাম, মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রায় ২০টি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী সভার আলোচনা সাংবাদিকদের অবহিত করেন।