এক পায়ে জীবনযুদ্ধ

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার কলাদী এলাকায় কর্মস্থলে বিল্লাল হোসেন  l ছবি: প্রথম আলো
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার কলাদী এলাকায় কর্মস্থলে বিল্লাল হোসেন l ছবি: প্রথম আলো

তখন তাঁর বয়স ১৭। চালকলে শ্রমিকের কাজ করতেন। একদিন কলের ফিতার সঙ্গে পরণের লুঙ্গি আটকে যায়। এতে তাঁর ডান পা ভেঙে যায়। পরে বাঁ পা-ও প্রায় অচল হয়ে যায়। তবুও দমেননি। যেখানে অন্যের ওপর নির্ভর করে তাঁর চলার কথা, সেখানে দিনমজুরি করে সংসার চালাচ্ছেন।

ওই হার-না-মানা ব্যক্তির নাম বিল্লাল খান (৩৭)। বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চৌরাঙ্গা গ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে ২০০৮ সালে মতলব দক্ষিণ উপজেলায় আসেন। স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে নবকলস এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

বিল্লাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের জমিজমা নেই। অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে পারেননি। সংসারের হাল ধরতে ১৩ বছর বয়সেই শুরু করেন দিনমজুরের কাজ। এ-কাজ, ও-কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়েই চলত সংসার। ১৯৯৮ সালে শ্রমিকের কাজ নেন হাজীগঞ্জ উপজেলায় এক ব্যক্তির চালের কলে। ওই বছর কল চালাতে গিয়ে আচমকা কলের ফিতার সঙ্গে পরণের লুঙ্গি আটকে ডান পা ভেঙে যায় এবং বাঁ পা জখম হয়। ওই দিন ভর্তি হন চাঁদপুর সদর হাসপাতালে। পরে ডান পা কেটে ফেলেন চিকিৎসকেরা।তখন থেকে হাঁটতে হয় ক্রাচে ভর করে।

বিল্লাল বলেন, পা হারানোর পর আশপাশের অনেকেই ভিক্ষা করতে বলেন। করুণার চোখেও দেখতেন অনেকে। তবু মন খারাপ করতেন না। সিদ্ধান্ত নেন খেটে আয়রোজগার করবেন। কারও দয়া নেবেন না। এরপর ফরিদগঞ্জের টোরা মুন্সীরহাট বাজারে একটি চায়ের দোকান দেন। ওই দোকানের আয় দিয়ে পরিবারের সবার মুখে দু-বেলা ভাত জোটাতে পারতেন না। ২০০৮ সালে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আসেন মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। ভাড়াবাসা থেকে ক্রাচে ভর করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির ইট ভেঙে সুরকি তৈরির কাজ করেন। সকাল-সন্ধ্যা কাজ করে প্রতিদিন পান ৩০০-৩৫০ টাকা। এ টাকায় চলছে সংসার। অর্থাভাবে বড় মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি।

উপজেলা সদরের কলাদী এলাকার জিল্লুর রহমান বলেন, তাঁর পায়ের অবস্থা দেখে প্রথমে তাঁকে দিয়ে ইট ভাঙাতে চাননি। পরে তাঁর মনের শক্তি ও সংসারের অভাবের কথা জেনে কাজ দেন। প্রাপ্য মজুরির এক টাকা বেশি দিলেও নিতে চান না। ইচ্ছা থাকলে যে সব বাধাই জয় করা সম্ভব, সেটি দেখিয়েছেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, অনেক সক্ষম মানুষই কাজ করে খেতে চায় না। শারীরিক প্রতিবন্ধিকতা জয় করে বাঁচার জন্য ওই ব্যক্তি লড়াই করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।