ফেসবুক বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনা

* পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে আসনে বসতে হবে।
* প্রশ্নপত্রের মোড়ক খুলতে হবে আধা ঘণ্টা আগে।
* পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ।
* অভিন্ন প্রশ্নে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা।

এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। প্রথম আলো ফাইল ছবি।
এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। প্রথম আলো ফাইল ছবি।

নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়েও বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পারছে না সরকার। এখন আসন্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ‘সীমিত সময়ের’ জন্য ফেসবুক বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে গিয়ে নিজ নিজ আসনে বসা বাধ্যতামূলক।

একই উদ্দেশ্যে আজ শুক্রবার থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষাসংক্রান্ত জাতীয় তদারক কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো প্রশ্ন ফাঁসের ‘আখড়া’।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এসএসসি পরীক্ষা।

অবশ্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের উৎস বের করে তা বন্ধ না করলে ফেসবুক বন্ধ করাসহ নতুন উদ্যোগও খুব কাজে আসবে বলে মনে করেন না শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, ছাপা ও বিতরণ হয়, তাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা কঠিন। কারণ অনেক হাত ঘুরে এই প্রশ্নপত্র পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থীদের হাতে যায়। সেখানে যেকোনো এক জায়গা থেকে প্রশ্ন ফাঁস হলেই তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে এবার সারা দেশের সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরীক্ষা হবে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে। ফলে ঝুঁকি আরও বেশি।

সাময়িকভাবে ফেসবুক বন্ধের উদ্যোগটি নিয়েই বেশি সমালোচনা হচ্ছে। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, ফেসবুক তো আর প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারে না। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন প্রচারে সহায়তা করে। তাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল উৎপাটন করতে হবে।

কেউ কেউ পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রে গিয়ে নিজ নিজ আসনে বসা নিয়েও সমালোচনা করছেন। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরগুলোতে প্রচণ্ড যানজট হয়। সেখানে কোনো কারণে যদি একজন পরীক্ষার্থী একটু দেরিতে যেতে বাধ্য হয়, তাহলে তাকে বা তাদের অন্তত তল্লাশি করে প্রবেশে সুযোগ দেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হলো, এখন ট্রেজারি, বিজি প্রেসসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর আগে আগে কেন্দ্র থেকে কিছু অসাধু শিক্ষক প্রশ্নপত্র নানা কৌশলে বাইরে পাঠিয়ে দেন। তাই তাঁরা সব পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ হলো, আগের চেয়ে একটু সময় বেশি হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

তবে কোচিং সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্তকে অনেকেই ইতিবাচক বলে জানিয়েছেন।

তদারক সভা

গতকালের সভায় পরীক্ষায় সীমিত সময়ের জন্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ রাখার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে সভায় জানানো হয়। সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

সভায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষার সময় প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে আমরা খুবই “ডেসপারেট”, খুবই “অ্যাগ্রেসিভ”। এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।’

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা হবে। এর আগে কেউ খুললে তাঁর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়টি দেখার জন্য এবার আলাদাভাবে সরকারি লোক থাকবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে জানিয়ে সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, পরীক্ষার পরও যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সে ক্ষেত্রেও সেই পরীক্ষা বাতিল হবে।

সভায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন আনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের গাফিলতি পাওয়া গেছে। এটা যেন কোনো রকমে না হয়। কারণ একটা গাফিলতি থেকে সারা দেশে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। সামনে নির্বাচন, সরকারকে বিব্রত করার জন্য অনেক মানুষ ইচ্ছা করেও এই কাজটি করতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে।

 সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।