মহামায়ায় শামুকখোলের মেলা

হ্রদের জলে ডুবন্ত গাছের ডালে শামুকখোল পাখি। গত সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া হ্রদে l প্রথম আলো
হ্রদের জলে ডুবন্ত গাছের ডালে শামুকখোল পাখি। গত সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া হ্রদে l প্রথম আলো

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া হ্রদে বসেছে শামুকখোল পাখির মেলা। বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত এই পাখি মহামায়া হ্রদের চারপাশের পাহাড়ে ও গাছের ডালে স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছে। এতে হ্রদের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। পাখির আনাগোনা আকর্ষণ করছে হ্রদে ঘুরতে আসা পর্যটকদের।

পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, শামুকখোলের অন্য নাম এশিয়ান ওপেন বিল। দেখতে বকের মতো, তবে ঠোঁট লম্বা ও ভারী। গায়ের রং ধূসর সাদা। পাখিটির দৈর্ঘ্য কমবেশি ৮১ সেন্টিমিটার। জলাশয়ে ঘুরে ঘুরে শামুক-ঝিনুক ধরে খায় এই পাখি।

গত সোমবার বিকেলে মহায়ামা হ্রদে গিয়ে দেখা যায়, হ্রদের উত্তর পাশের পাহাড়ের ওপর কয়েকটি গাছের ঢালে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে শামুকখোল পাখি। অল্প কিছু দূরত্বের দুটি গাছে ২৫-৩০টি শামুকখোলের দেখা মিলল। আশপাশের অন্য গাছগুলোতেও ছড়িয়ে-ছটিয়ে আছে আরও বেশ কিছু পাখি। স্থানীয় কয়েকজন নৌকার মাঝি জানিয়েছেন, এখানে পাখিগুলো বছর-দুয়েক ধরে দেখা যাচ্ছে। সকালে এরা খাবারের খোঁজে উড়ে চলে যায়। বিকেল হতেই দলে দলে হ্রদে ফিরে আসে পাখিগুলো। মাছরাঙা, ডাহুক আর পানকৌড়িদের সঙ্গে এই পাখিও পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মিরসরাইয়ের মহামায়া হ্রদে শামুকখোল পাখির এমন আবাসস্থল তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে এখানে বেড়াতে আসা চট্টগ্রাম শহরের একটি বেসরকারি কলেজের বাংলার শিক্ষক আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকায় শামুকখোল পাখি যখন বিপন্নপ্রায় তখন মহামায়া হ্রদে নতুন করে পাখিটির আবাসস্থল তৈরি বেশ সুখের খবর। এখানে এসে হ্রদের পাড়ের গাছে গাছে পাখিটির ওড়াউড়ি দেখে বেশ ভালো লাগল।’

বন বিভাগের মিরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহামায়া হ্রদে বাংলাদেশে বিলুপ্তির পথে থাকা শামুকখোল পাখির বাসস্থান গড়ে ওঠার বিষয়টি আমরা জানি। শুধু শামুকখোল নয় এখানে মাছরাঙা, পানকৌড়ি, ডাহুকসহ সব ধরনের পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরিতে নজর রাখা হচ্ছে। পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমত এই এলাকায় পাখি শিকার নিষিদ্ধসহ হ্রদের পানিতে এসব পাখির খাদ্য নিশ্চিত করতে বড়শি ছাড়া যেকোনো ধরনের জাল ফেলে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’