কান ফাটানো গান যখন পরীক্ষার্থীর কান্না

সপ্তাহ দু-এক আগের ঘটনা। সকাল থেকেই পাবনার বেড়া পৌর এলাকার শেখপাড়া মহল্লার একটি বাড়িতে বাজতে থাকে উচ্চ শব্দে গান। ওই বাড়ির কাছেই আরেকটি বাড়িতে এবারের এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল এক শিক্ষার্থী। সাউন্ড বক্সের বিকট শব্দের কারণে কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারছিল না ওই শিক্ষার্থী। ঘণ্টা দু-এক অপেক্ষার পরেও যখন শব্দ থামল না, তখন শিক্ষার্থীর মা খোঁজ নিয়ে জানলেন কাছের একটি বাড়িতে খতনার অনুষ্ঠান হবে তিন দিন পরে। সেই অনুষ্ঠান উপলক্ষেই ভাড়া করে আনা হয়েছে বিশাল আকারের দুটি সাউন্ড বক্স। খতনার অনুষ্ঠান না হওয়া পর্যন্ত তিন দিন ধরে বাজানো হবে গান।

শিক্ষার্থীর মা সেই বাড়িতে গিয়ে তাঁর সন্তানের এসএসসি পরীক্ষার কথা বলে অনুরোধ করলেন গানের শব্দ কিছুটা কমাতে। কিন্তু গানের শব্দ তো কমলই না, উল্টো বাড়ির লোকদের কাছে অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হলো তাঁকে। ওই শিক্ষার্থী তিন দিন ধরে মন দিয়ে পড়াশোনা প্রায় করতেই পারল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষার্থী বলে, ‘জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার আগে উচ্চ শব্দে গান বাজানোয় বই সামনে নিয়ে শুধু কেঁদেছি। নিশ্চয়ই আমার মতো অন্য পরীক্ষার্থীরও উচ্চ শব্দে এমন দশাই হয়। বিষয়টি কি দেখার কেউ নেই?’

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। অথচ পাবনার বেড়া উপজেলার বিভিন্ন পাড়ামহল্লায় দিনে-রাতে উচ্চ শব্দে গানবাজনা বেজে চলেছে। বিয়ে, গায়েহলুদ, খতনা, জন্মদিনসহ যেনতেন যেকোনো অনুষ্ঠানে সাউন্ড বক্স ভাড়া করে এনে বাজানো হচ্ছে গান। এতে পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। তবে এমন উচ্চ শব্দে গান যে শুধু এবারের এসএসসি পরীক্ষার সামনের এই সময়টাতেই বাজানো হচ্ছে, তা নয়। সারা বছর ধরেই এসব বাজানো হয়ে থাকে। ফলে পিইসি, জেএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি পরীক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরাও উচ্চ শব্দের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, অনেক বাড়ির লোকজন রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না।

এলাকাবাসী জানায়, উপজেলায় বিশেষ করে বেড়া পৌর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হলেও ঝামেলা এড়াতে কেউ তাতে তেমন বাধা দেয় না। এর ওপর আবার ২০১১ সালের ১০ নভেম্বর পৌর এলাকার দক্ষিণ বনগ্রাম মহল্লায় উচ্চ শব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন (৩২) নামের এক পরিবহন শ্রমিক খুন হন। বিষয়টি এখনো এলাকার অনেকের মনে থাকায় অসুবিধা হওয়া সত্ত্বেও উচ্চ শব্দে গান বাজানোর বিষয়টি মুখ বুজে সহ্য করছে এলাকাবাসী।

বেড়া পৌর এলাকার দুটি সাউন্ড সিস্টেমের দোকানে কথা বলে জানা যায়, শুধু বেড়া পৌর এলাকাতেই অন্তত ১২টি সাউন্ড সিস্টেমের দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে দৈনিক চার শ থেকে এক হাজার টাকা ভাড়ায় এক জোড়া সাউন্ড বক্স ভাড়া পাওয়া যায়। সেগুলো ভাড়ায় এনে যেকোনো মুঠোফোনের সঙ্গে যুক্ত করে বাজানো হয়।

বেড়া পৌর এলাকার হাতিগাড়া মহল্লার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘আমার হার্টের অপারেশন হয়েছে। এখনকার সাউন্ড বক্সগুলোর বিকট শব্দে বাড়ির জানালা-দরজা কেঁপে ওঠে। যেখানে অল্প শব্দতেই আমার মতো রোগীর বুক ধড়ফড় করে, সেখানে ওই বিকট শব্দে আমার কী অবস্থা হয়, তা কী করে বোঝাব?’

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম বলেন, ‘উচ্চ শব্দে মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজানোর ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দিলে আমি নিজে গিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেব।’