রুবিনা হতাশ, কাঁদছেন স্বজনেরা

রুবিনা আক্তার
রুবিনা আক্তার

খেয়ে না-খেয়ে লেখাপড়া করছিলেন রুবিনা আক্তার। উপায় ছিল না আর। বাবাকে হারিয়েছেন শৈশবে, বড় বোনটি মানসিক প্রতিবন্ধী। লেখাপড়া শেষ করে পরিবারটাকে টেনে তুলবেন, সেই চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যেই রেলে কাটা পড়ে দুই পা হারালেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রুবিনা কাঁদছেন। কাঁদছে তাঁর পরিবার আর গ্রামের মানুষও।

গত রোববার কমলাপুর রেলস্টেশনে রেললাইন ধরে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেক প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার সময় রেলইঞ্জিনের নিচে পড়ে দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রুবিনা আক্তারের (২২)। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রুবিনার চাচা আলমগীর হোসেন মল্লিক গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুবিনা হতাশ। একটু পরপর শুধু জিজ্ঞাসা করে পা দুটো ঠিক হবে কি না। কাঁদছে খুব। আমরা মিথ্যে
আশ্বাস দিচ্ছি, বলছি সব ঠিক হয়ে যাবে।’

রুবিনার মা রহিমা খাতুন জানান, রুবিনা সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি নিজে গ্রামের বাড়িতে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালেন। কখনো কখনো আত্মীয়স্বজনেরা টাকাপয়সা দিয়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া রুবিনা বেসরকারি ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া বৃত্তির টাকা আর টিউশনি করে পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছিলেন। বৃত্তির টাকাটা সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যায়। অর্থকষ্টে পড়েছিলেন। শারীরিক কিছু সমস্যাও ছিল। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। অস্থিরতার মধ্যে ছিলেন। ঘটনার দিন ক্লাস শেষ না করেই
পঞ্চগড়ের দণ্ডপাল ইউনিয়নের গ্রামের বাড়ির পথ ধরেছিলেন। বাড়ি যাওয়া হয়নি, রহিমা বেগমই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পথ ধরেছেন।

দণ্ডপাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সুরুত জামাল জানান, রুবিনার খবর শুনে তাঁর পরিবারের সদস্যদের মতো এলাকার লোকজনও কষ্ট পাচ্ছে। রুবিনার দিকে তাকিয়ে ছিল তাঁর পরিবার। পরিবারের পক্ষে রুবিনার উন্নত চিকিৎসার ব্যয়ভার চালানো সম্ভব না। তিনি বিত্তবানদের রুবিনার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানান।