শিম আর শিম...

সড়ক-মহাসড়কের পাশে, খেত কিংবা খেতের আল, সব জায়গায় শিম আর শিম। কোথাও গাছ থেকে ছেঁড়া হচ্ছে শিম। আবার কোথাও বস্তাভর্তি করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নেওয়ার জন্য।

শিমের রাজ্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পৌর সদর থেকে উত্তর দিকে বড় দারোগাহাট পর্যন্ত এবং পূর্বে পাহাড় থেকে পশ্চিমে সাগরপাড়ের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত প্রতিদিন এ দৃশ্য দেখা যাবে।

কৃষকেরা কেউ কেউ শিমের থোকা থেকে শিম ছিঁড়ে নিচ্ছেন। তোলা শিম বাজারে নিচ্ছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ স্থানীয় সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিক্রি শেষে আবার খেতে ফিরছেন নতুনভাবে তোলার জন্য। এভাবে কাজ চলতে থাকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, একটি ঘূর্ণিঝড় ও অসময়ে দুই দফা টানা বৃষ্টিতে শিমের ফুল ঝরে যায়। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিম উৎপাদনে। শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকলে দেরিতে হলেও ফুল ও ফলন আসতে শুরু করে। অন্যান্যবারের তুলনা কিছুটা কম ফলন হলেও দাম বেশি থাকায় কোনো কৃষকেরা অখুশি নন। তাঁরা বলছেন, বেশি লাভ না হলেও ক্ষতি কারও হবে না।

গত শনি ও রোববার সীতাকুণ্ডের কৃষিপ্রধান ইউনিয়ন মুরাদপুর, সৈয়দপুর, বারৈয়ারঢালা ও পৌর সদরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা ভ্যানগাড়িতে করে খাঁচিভর্তি শিম বাজারে নিচ্ছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে সীতাকুণ্ড সদর থেকে বড় দারোগাহাট পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়কের অন্তত ২০ স্থানে শিম জমিয়ে বস্তাভর্তি করা হচ্ছে। শিমগুলো বহনের জন্য প্রতিটি স্থানে ট্রাক দাঁড় করানো রয়েছে। মাঠের জমিগুলোর আলের ওপর শিমের খাঁচি ভর্তি করে কোথাও স্তূপ করে রাখা হয়েছে। অনেক কৃষককে কোমরে খাঁচি বেঁধে শিম তুলতে দেখা গেছে।

খেতেই কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে একজন সীতাকুণ্ড পৌর সদরের নূনাছড়া এলাকার কৃষক আয়ুব আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুই একর জমিতে শিম চাষ করেছেন। তাঁর খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো। শিম বিক্রিতে তাঁর খরচের টাকা উঠে গেছে। সপ্তাহে তিনি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কেজি পর্যন্ত শিম তুলছেন। এখন যা শিম বিক্রি করা হবে, তা তাঁর লাভ হবে। এবার বৃষ্টি না হলে অনেক বেশি লাভ করতে পারতেন তিনি।

বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের কৃষক কবির আহমেদ বলেন, তাঁর জমিগুলো কিছুটা নিচু হওয়ায় বৃষ্টিতে তিনি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দেড় একর জমিতে শিম চাষে তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকার ওপরে। তিনি এখনো খরচ তুলতে পারেননি। তিনি বলেন, তাঁর এলাকায় এমনও কৃষক রয়েছেন, যাঁরা এখনো নিজেরাই শিম খেতে পারেননি। তবে আগামী ১০ দিন যদি শীত পড়ে, তবে সবাই খরচ তুলে লাভের মুখ দেখবেন বলে জানান তিনি।

কৃষকেরা জানান, একটি তাবা তৈরি করতে তিনটি করে বাঁশের কঞ্চি লাগে। লাগানোসহ তাতে খরচ পড়ে ২৫ টাকা। এক শতক জমিতে এ রকম ৩৫ থেকে ৪০টি তাবা করা যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ডে শিম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮০০ হেক্টর। জমি, পাহাড়সহ এবার তিন হাজার হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এবার উপজেলায় ছুরি, বাঁটা, পুঁটি, রূপবান ও কার্তিকোডা নামে মোট পাঁচটি জাতের শিম চাষ করা হয়েছে।

নূনাছড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ধারে শিম কিনে বস্তাভর্তি করছিলেন ঢাকার ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডের ছুরি ও বাঁটা শিমের চাহিদা বেশি। যদিও অন্যান্য শিমের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি। তিনি ৫ টন ২০০ কেজি শিম কিনেছেন। রাতের মধ্যে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নেবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এবার প্রকৃতির বৈরিতার কারণে সবজির ফলনের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। দেরিতে ফলন এসেছে। এবার দামও বেশি পাচ্ছেন কৃষকেরা। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে সীতাকুণ্ডে ১৫০ কোটি টাকার শিম বিক্রি হবে বলে জানান তিনি।