ডিসেম্বরে নির্বাচন, নৌকায় ভোট চাই: প্রধানমন্ত্রী

গতকাল সিলেটে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল সিলেটে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুফি-সাধকদের পুণ্যভূমি সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার শুরু করলেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সেখানে দলের সমাবেশে তিনি বলেন, এ বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন তিনি।

সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিকেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর পুণ্যভূমি সিলেট থেকে আজকে আমরা নির্বাচনী প্রচার শুরু করছি। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের জন্য আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকার যে কাজ করে যাচ্ছে, তাতে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে দেশবাসী উন্নয়নের ছোঁয়াটা পেত না। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘লুটেরা (বিএনপি) ক্ষমতায় এলে লুটপাট করে খেত। আর সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চালাত।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা অতীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই বাংলার মানুষ তাঁর স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই আজকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সম্মান পেয়েছে। বাঙালি কারও কাছে হাত পেতে চলবে না, মাথা উঁচু করে চলবে, আর তা নিশ্চিত করতে হলে আগামী যে নির্বাচন সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে নৌকা মাকায় ভোট চাই।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় হাত তুলে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জনগণের ওয়াদা চাইলে সবাই সমস্বরে চিৎকার করে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন।

সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রমুখ সমাবেশে বক্তৃতা করেন। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সমাবেশে সভাপতিত্বে করেন। জনসভার আগে এই আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভাস্থল থেকেই প্রধানমন্ত্রী একযোগে সিলেটের ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেটে শেখ হাসিনার তৃতীয় সফর এটি। এ উপলক্ষে পুরো নগরী সাজানো হয় ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর তোরণে। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রাক্‌-নির্বাচনী এই জনসভায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য তাঁর চলার পথের দুই দিকে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে স্বাগত জানায় লাখো জনতা।

সরকারের উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের ছোঁয়া সিলেটের প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে দিয়েছি। সিলেটের উন্নয়নের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আজ একযোগে ৩৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করে তাঁর সরকার পাঁচ বছরে পদার্পণ করেছে। সামনে ২০১৮ সালের শেষের দিকে দেশে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরে পদার্পণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। নৌকা মার্কায় জনগণ ভোট দেওয়ার কারণেই আজকে বাংলার ঘরে ঘরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের সুনাম হয়। বাংলাদেশ পুরস্কার পায়। অপর দিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ তিরস্কৃত হয়। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস হয়ে যায় তাদের মূল কাজ।

প্রধানমন্ত্রী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ গত নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপির তথাকথিত আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে সন্ত্রাস-তাণ্ডব চালিয়েছিল। সে সময় অনেক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সিএনজিচালককে পুড়িয়ে মেরেছে তারা। হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা গাছ লাগাই, তারা গাছ কেটে ফেলে, আমরা রাস্তা করি, তারা ধ্বংস করে। তবে আমরা তাদের সেই জ্বালাও-পোড়াও কঠোর হাতে দমন করেছি। জনগণ যখনই তাদের প্রতিরোধ করেছে, তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের কারণে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তাদের আমলে বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি, জঙ্গিবাদের সৃষ্টি। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশে সন্ত্রাস ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দূর করতে সক্ষম হয়েছে বলেই সিলেটবাসী আরামে ঘুমাতে পারছেন। সিলেট আজকে শান্তির নগরী। এই শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, গ্রামগঞ্জ এবং ওয়ার্ড-ইউনিয়নে তিনি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই সিলেটের প্রয়াত রাজনীতিক আবদুস সামাদ আজাদ, হুমায়ুন রশীদ চৌধরী, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, দেওয়ান ফরিদ গাজী ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে স্মরণ করেন।

সকালে বিমানে সিলেটে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী সরাসরি শহরের দরগাহ মহল্লায় যান। সেখানে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত ও মোনাজাত শেষে যান শহরের খাদিম নগরে, হজরত শাহপরান (রহ.) মাজারে। এরপর সুরমা পারের কুশিঘাট এলাকায় হজরত গাজী বোরহান উদ্দীনের মাজার জিয়ারত করেন তিনি। বিকেলে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় যোগদান করেন। সেখানে তিনি সিলেটবাসীর জন্য ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।