শিল্প ঘোষণায় কী লাভ হলো?

কথা ছিল চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত নানান যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কছাড় পাওয়া যাবে। কিন্তু শুল্ক বিভাগের তফসিলে এসব যন্ত্রপাতির নাম বিস্তারিতভাবে নেই। চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ পাওয়ার কথা। প্রযোজক ও নির্মাতারা বলছেন, ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে না।

তাহলে দেশের রুগ্‌ণ চলচ্চিত্র খাতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ঘটা করে এটাকে শিল্প ঘোষণা করে কী লাভ হলো? বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান বলেন, এতে কোনো লাভই হয়নি। কোনো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না।

২০১০ সাল থেকে চলচ্চিত্র শিল্পে তীব্র মন্দার কারণে এটিকে শিল্প খাত হিসেবে ঘোষণার জোর দাবি উঠেছিল। ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দাবি মানার ঘোষণা দেন। ওই বছরের ২৪ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, এখন থেকে চলচ্চিত্র শিল্প অন্যান্য শিল্পের মতোই যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পাবে।

সুবিধাবঞ্চিত এফডিসি

চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রাণকেন্দ্র সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) এখনো শিল্প হিসেবে নিবন্ধিত নয়। এটিকে বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে বাণিজ্যিক হারে—প্রতি ইউনিট ৮.৩০ টাকা হারে। শিল্পের জন্য প্রযোজ্য নমনীয় ৮.০৫ টাকা হারে নয়। বিএফডিসির পরিচালক (টেকনিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং) মুহাম্মদ আজম প্রথম আলোকে বলেন, নমনীয় হারে বিদ্যুৎ বিল আদায়ের জন্য তাঁরা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) কাছে একাধিকবার আবেদন করেও সাড়া পাননি। এ নিয়ে খুব শিগগির তাঁরা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে যাবেন।

গত কয়েক বছর এফডিসি ক্যামেরা, শব্দগ্রহণ যন্ত্র, সম্পাদনা যন্ত্র, লাইটসহ বেশ কিছু যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে বাণিজ্যিক শুল্ক দিয়ে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা এ তথ্য দিয়ে বললেন, প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ ছিল বলে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে ভাবেননি।

পরিবেশকদের কোনো লাভ হয়নি

যাঁরা চলচ্চিত্র পরিবেশন ও প্রদর্শনের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদেরও প্রজেক্টর, শব্দযন্ত্র, ডিজিটাল পর্দা ইত্যাদি যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। প্রতিটি পণ্যের ক্যাটাগরির ওপর আলাদা হারে শুল্ক নির্ধারণ করা আছে। এসব পণ্যে শুল্কছাড় পাওয়ার কথা। কিন্তু শুল্ক বিভাগের তফসিলে পণ্যের তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে একটি সিনেপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি জানান, বিদেশ থেকে সিনেমা হলের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে কোনো রকমের শিল্পসুবিধা পাননি তিনি। তিনি বলেন, আগে চলচ্চিত্রের কাঁচামাল (ফিল্ম) আমদানিতে একটা ছাড় ছিল। এখন সবকিছু ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী লায়ন সিনেমা হলের মালিক মির্জা আবদুল খালেক বলেন, তাঁরা বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধন করেছেন। রাজস্ব বোর্ডে কাঙ্ক্ষিত পণ্যের তালিকা দিয়েও আমদানির সময় শুল্কের বিষয়ে কোনো ছাড় পাওয়া যায়নি।

বগুড়া শহরে মধুবন সিনেমা হলের আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটির মালিক আর এম ইউনুস প্রথম আলোকে জানান, আপাতত ৩০০ আসনের সুবিধা নিয়ে আধুনিক সিনেপ্লেক্স করবেন তিনি। ছবি প্রদর্শন এবং হলের ভেতরের সব সামগ্রীই আমদানি করতে হয়েছে। শিল্পসুবিধা না পেলে এই মন্দা বাজারে কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার নওশাদ প্রথম আলোকে বলেন, মাসে যে পরিমাণ টিকিট বিক্রি হয়, বিদ্যুৎ বিল তার চেয়ে বেশি আসে। লোকসান গুনতে হয় প্রতি মাসে।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর মনে করেন চলচ্চিত্রের এই সংকটের মুহূর্তে শিল্পের সুবিধা পাওয়াটা খুব জরুরি। কেননা এখন পুরো শিল্পকে নতুন করে সাজাতে হবে। প্রতিটি শপিং মলে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেপ্লেক্স বানাতে হবে। ছবি নির্মাণ এবং নতুন সিনেপ্লেক্স বানানো এবং পুরোনো হল সংস্কারে সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনজুরুর রহমান চলচ্চিত্র শাখাটি দেখভাল করেন। তিনি বলেন, গত দেড় বছরে কোনো প্রতিষ্ঠান বা চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ তাঁর সঙ্গে কথা বলেনি।