'অন্তত ৫০০০ পরিবারের ভাগ্য বদলাত'

ব্যাংকের মোট মূলধন ২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ঋণ দেওয়া যায়। অর্থাৎ এক গ্রাহক ৭৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পেতে পারেন না। কিন্তু জনতা ব্যাংক এক গ্রাহককেই ছয় বছরে দিয়েছে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা। প্রথম আলোর ফেসবুকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। অনেক পাঠক সেখানে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন।

মোহসিন তালুকদার লিখেছেন, ‘পরিশোধ করতে না পারলে তো সাধারণ জনগণ আছেই। এবার না-হয় চালের দাম ১০০ টাকা হবে আর পেঁয়াজ ৫০০ টাকা।’

বাপ্পা রাজ দেব লিখেছেন, ‘অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলা যায়, ৫০০০ কোটি টাকা কিছুই না।’

নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে মো. কাশেম আলী লিখেছেন, ‘আমি ২৫ হাজার টাকা বেতন পাই, আমি লোনের জন্য আবেদন করি ৩ লাখ টাকা, ব্যাংক আমার কাছে যা যা চায়: দুজন গ্যারান্টার, তাঁদের আইডি কার্ড, বেতনের সার্টিফিকেট, নিজের আইডি কার্ড, জন্মসনদ, বিদ্যুৎ বিলের কাগজ, অফিসের আইডি কার্ড, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং আরও কিছু কাগজপত্র। সবকিছু দেওয়ার পরে আমাকে জানানো হয়, আপনার লোন পাস হয় নেই। কারণ, যারা গ্যারান্টার তাদের ঢাকায় বাড়ি নেই তাই। আমি টাকা ফেরত দিতাম, তাই হয়তো আমাকে ঋণ দেয়নি। আমার হিসাবে ওই লোককে ৫০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া উচিত, কারণ সে তো আর টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য নেবে না।’

ইসলাম রেজ লিখেছেন, ‘আহারে বেচারা! কত টাকার ঋণ করে বসে আছে। সবার উচিত ঋণগ্রস্ত ভাইটির পাশে দাঁড়ানো। জনগণ কোথায়? তাঁকে ঋণমুক্ত করার জন্য ফেসবুক ইভেন্ট কেন খোলা হচ্ছে না! নাহ্, বাঙালির মায়া দয়া উঠে গেছে।’

ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার প্রবণতার ধরন এ রকমই জানিয়ে শামসুল আলম শাকিল লিখেছেন, ‘ব্যাংকগুলোর কাজই এমন। অনেক নতুন উদ্যোক্তা টাকার অভাবে তাদের স্বপ্নের বীজ বপন করতে পারছেন না, আর একজনকেই এত টাকা দেওয়া হচ্ছে, এটা হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়।’

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি দরকারি—সেটা জানিয়ে মো. সোহেল রানা লিখেছেন, ‘ডাকাতি ছাড়া আর কী বা বলা যায়। যেখানে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির কোনো নামগন্ধ নেই, সেখানে কোনো উন্নতি এবং অগ্রগতি নেই।’

নানা পক্ষের যোগসাজশে এ ধরনের কর্মকাণ্ড হয় বলে মনে করেন সুমন সরোয়ার। তিনি লিখেছেন, 'যদি ঋণগ্রহীতা পাঁচ হাজার কোটি টাকা থেকে এক হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কমিশন দিয়ে বাকি চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে, নিশ্চয় সেটা বেমানান হবে না! আর সেই ক্ষতি পূরণ করার জন্য জনগণের ঘাম ঝরানো শত ভাগ হালাল টাকা তো আছেই! এই সুযোগে ব্যাংকার এবং ঋণগ্রহীতা সবাই কোটিপতি! আমরা যারা লিয়াকত আলী আছি, তারা নাহয় এসব কোটিপতির জুতার কালি নিয়েই ব্যস্ত থাকলাম!!! আমার প্রশ্ন হলো, এই লজ্জা কার? আপনার, আমার, না এই দেশের?’

ঋণ শোধ করার আগেই কেন তাকে বারবার টাকা দেওয়া হলো, সে বিষয়টা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কিবরিয়া আলাউল। তিনি লিখেছেন, ‘মজার বিষয় হলো, সব টাকা ওরা একসঙ্গে নেয়নি। ছয় বছরে নিয়েছে। প্রথম বছর বা প্রথম দুই বছর ঋণ সমন্বয় করতে না পারার পরও লোন দেওয়া হয়েছে। এত বড় দুর্নীতিটা যে ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যন্ত ওপরের স্তরের কুকামকারীদের যোগসাজশেই হয়েছে। এদের সবার থেকেই লোনের সব টাকা আদায় করতে হবে।’

আগের চেয়ে চুরির পরিমাণ বেড়েছে জানিয়ে মোকতার হোসাইন লিখেছেন, ‘বলার কেউ নেই, দেখার কেউ নেই। আগে পুকুরচুরি হতো, এখন সমুদ্রচুরি হয়। যারা লোনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, ওরা ৫-১০ কোটি করে পাবে। সমস্যা কই? জনগণ আছে না। আমরাই শোধ করে দেব। জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিলে এই টাকা কয়েক দিনেই উঠে যাবে। আমরা দু-একদিন চিল্লাচিল্লি করব, তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। নতুন একটা ইস্যু তৈরি হবে। আমরা সেটা নিয়ে পড়ে থাকব।’

হোসাইন রায়হানের পরামর্শ, ‘এমনিতেই তো লুটপাট হবে, তার চেয়ে এক কোটি টাকা করে ৫০০০ জনকে দিলেও তো ভালো হতো, অন্তত ৫০০০ পরিবারের ভাগ্য বদলাত।’