ঢাকার ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদক ব্যবসায় ২৪ জন

>• শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
• তালিকায় ছাত্রলীগের সাত নেতা-কর্মী ও যুবলীগের দুই নেতার নাম।
• এক পুলিশের কর্মকর্তার নাম আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজধানীর আরও ছয়টি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার তথ্য এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, ধানমন্ডির ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি।

সম্প্রতি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে এই ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ২৪ জনের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছাত্রলীগের দুই নেতা, পাঁচ কর্মী ও যুবলীগের দুই নেতার নাম রয়েছে। পুলিশের একজন উপপরিদর্শকের নামও আছে এই তালিকায়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় ক্যাম্পাসে মাদক বিক্রেতা হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্র মো. পারভেজ, মো. সৌরভ, মো. তুষন, মো. জুয়েল ও মো. সম্রাট এবং ক্যাফেটেরিয়ার কর্মচারী আনোয়ার হোসেনের নাম রয়েছে। পাঁচ ছাত্রের সবাই ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী বলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, তালিকায় পূর্ণাঙ্গ নাম না থাকায় পাঁচ ছাত্রকে খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। কর্মচারী আনোয়ার হোসেনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি, সে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নয়।’

এর বাইরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন ওরফে রাসেলসহ তিনজনকে ২০১১ সালের ২৫ আগস্ট শান্তিনগরে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। মামলায় বলা হয়, তাঁদের কাছে ৫২২টি ইয়াবা পাওয়া যায়, যার মধ্যে ২০০টিই ছিল জয়নালের পকেটে। তারপরও জয়নাল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি গ্রেপ্তার হননি।

ঢাকা কলেজ
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা কলেজের আশপাশে মাদক বিক্রির বেশ কয়েকটি স্থান রয়েছে। এর মধ্যে প্রিয়াঙ্গনের গলি, ইস্টার্ন মল্লিকার উল্টো পাশের গলি, বাকুশাহ মার্কেটের বাবুপুরা গলি, নিউমার্কেটের পেছনের রাস্তা এবং বিজিবি সদর দপ্তরের ৩ নম্বর ফটকের আশপাশের গলিতে ইয়াবা কেনাবেচা হয় বেশি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী, মাদক ব্যবসায় জড়িত হিসেবে মনির নামে নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির একজন উপপরিদর্শকও রয়েছেন। নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাত থেকে আট মাস আগে মনির নিউমার্কেট এলাকায় কর্মরত ছিলেন। এখন আর এই থানায় নেই। তিনি তালিকা পাওয়ার পর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তাঁর বিষয়টি তদন্ত করে দেখেছেন।

এ ছাড়া মামুন ও মো. পলাশ নামে আরও দুজনের নাম রয়েছে, কিন্তু সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি
তালিকা অনুযায়ী, হাজারীবাগে অবস্থিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে মাদক ব্যবসা করেন রাইসুল ইসলাম ওরফে রবিন, মো. রাজীব, মো. সোহেল, মো. আলাউদ্দীন ও মোসাম্মৎ জামিলা।

হাজারীবাগ থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এঁদের মধ্যে রাইসুল ইসলাম হাজারীবাগ থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

থানার পরিদর্শক (অভিযান) মো. মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জামিলা একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। একসময় হাজারীবাগ এলাকায় সে ব্যবসা করলেও এখন যাত্রাবাড়ীর দিকে অবস্থান করে। মো. সোহেলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

তিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
ধানমন্ডির ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় ধানমন্ডি থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুজাউদ্দিন তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক এস এস আশফাক এবং রাশেদুর রহমান, মো. পাভেল, মো. জসীম ও মশিউর আলম ওরফে সোহাগের নাম এসেছে।

সুজাউদ্দিন তুহিন ও এস এস আশফাক দাবি করেন, তাঁরা মাদক বিক্রিতে জড়িত নন। তালিকায় নাম এসেছে শুনে তাঁরা ‘আকাশ থেকে পড়েছেন’।

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অভিযান) আ স ম আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তালিকায় মো. রাশেদুর রহমান, মো. পাভেল ও মো. জসীমের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেখানে গিয়ে এই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি।