প্রশ্নপত্র ফাঁস চলছেই

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি
>
  • এসএসসিতে পঞ্চম দিনেও প্রশ্ন ফাঁস।
  • ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলে ৪ জন আটক।
  • পরীক্ষা বাতিল হবে কি না, তা পর্যালোচনায় কমিটি কাজ করছে।

চলতি এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। যেদিনই পরীক্ষা হচ্ছে, সেদিনই পরীক্ষা শুরুর আগে আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ধর্ম বিষয়ের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে।

অবশ্য এখন প্রতিদিনই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত কোনো না কোনো ব্যক্তি আটক হচ্ছে। গতকাল ফরিদপুরে এবং টাঙ্গাইলে চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মোবাইল ফোনে পাওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার মূল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখের বেশি। এবার শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীক্ষা শুরুর আগে আগে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ছে, যা পরে মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছেই। আগের চারটি পরীক্ষাতেও একই কায়দায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। গতকাল সারা দেশে অসদুপায় অবলম্বনের জন্য মোট ৪৪ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। আর অনুপস্থিত ছিল ৮ হাজার ৩৮১ জন।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ খতিয়ে দেখা এবং পরীক্ষা বাতিল হবে কি না, সেটি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটি–সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক পর্যালোচনায় তাঁরা দেখেছেন, বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে পরীক্ষার্থীরা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। অভিভাবকেরাও পরীক্ষা বাতিল চাচ্ছেন না। তাই পরীক্ষা বাতিলের সম্ভাবনা কম।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়টি কমিটি যাচাই-বাছাই করছে। এর বাইরে তিনি কিছু বলতে চাননি।

ফরিদপুর থেকেপ্রথম আলোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল ফরিদপুরের সদরপুরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে দুই পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এই দুই ছাত্র উপজেলার চরবিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই দুই পরীক্ষার্থীকে আটক করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূরবী গোলদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ৯টা ৯ মিনিটে ওই দুই পরীক্ষার্থীর মুঠোফোনে সমাধান করা প্রশ্ন পাওয়া যায়। পরীক্ষা শুরুর পর দেখা যায়, ওই দুই ছাত্রের মুঠোফোনে পাওয়া বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) প্রশ্নগুলো হুবহু মিলে গেছে। পরে ওই দুই পরীক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

ওই দুই পরীক্ষার্থী জানিয়েছে, দুই প্রাইভেট শিক্ষক ফেসবুকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে তাদের দিয়েছে।

কোচিং-প্রাইভেট শিক্ষক আটক

টাঙ্গাইল থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিজানান, গতকাল সকাল ৯টার দিকে জেলার ভূঞাপুরে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম মিয়া বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, ভূঞাপুরের বাগবাড়ি গ্রামের রাসেল পারভেজ নামের এক যুবকের মোবাইল ফোনে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করা হয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে আটক করে।

ভূঞাপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরিফ আহমেদ বলেন, গতকালের ‘খ’ সেটের প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ওই মোবাইল ফোনের প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

ওই যুবকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বাগবাড়ি গ্রামের শহিদুল ইসলামকে আটক করে। এই দুজন বিভিন্ন কোচিংয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা ও শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াত।