কারমাইকেলের অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে কর্মসূচি চলছে

কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে শিক্ষক পরিষদের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি। কারমাইকেল কলেজ, রংপুর, ১১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে শিক্ষক পরিষদের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি। কারমাইকেল কলেজ, রংপুর, ১১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে আজ রোববারও শিক্ষক পরিষদের কর্মসূচি চলছে। শিক্ষকেরা সকাল ১০টা থেকে ক্লাস বর্জন করে কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ মিয়ার অপসারণ দাবি করে শিক্ষক পরিষদ গতকাল শনিবার থেকে কর্মসূচির ডাক দেয়। অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন শুরু করেছে।

আজ বেলা ১১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে শিক্ষকেরা কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বুকে কালো ব্যাজ পরে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে কলেজের ১৮টি বিভাগের একটিতেও কোনো ক্লাস অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম। যাঁরা কলেজে এসেছেন, তাঁদের জটলা করে বিভিন্ন স্থানে গল্প করতে দেখা যায়।

কলেজ ক্যাম্পাসের প্রবেশপথে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই ক্লাস খুব কম হয়ে থাকে, তার ওপর আন্দোলন। একসময় একসঙ্গে পড়ার চাপ সামলানো কষ্টকর হয়ে উঠবে বলে তাঁর ভাষ্য।

একই দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কলেজ শাখার সভাপতি হোজায়ফা সাফওয়ান, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি এহতেশাম, জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি আরিফ আলী, ছাত্র ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অর্মিতা নন্দ, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল আলম প্রমুখ। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে সমাবেশ।

শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী করে বলেন, ‘তিনি (অধ্যক্ষ) আমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে নিজের মতো কাজ করে থাকেন। বিষয়টি জানতে চাইলে সবার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। কেউ যদি প্রতিবাদ করে, তাহলে তাদের বদলি করার হুমকি দেওয়া হয়।’

কলেজ ক্যাম্পাসে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ অধ্যক্ষ ক্যাম্পাসে যাননি। অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিক্ষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কলেজে নানামুখী কাজ করতে চাই। ১৮টি বিভাগে মাল্টিমিডিয়া বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক কর্মশালার কাজ গত ২৫ জানুয়ারি শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে এসব কাজ হবে। এমন ভালো কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে শিক্ষক পরিষদ আমার বিরুদ্ধে কোনো কারণ ছাড়াই উঠেপড়ে লেগেছে।’

অধ্যক্ষ গত বৃহস্পতিবার রাতে উপাধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরীসহ নয়জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।

উপাধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাক বলেন, শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের সঙ্গে সকল শিক্ষক জড়িত। ওনার (অধ্যক্ষ) অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কোনো ক্লাস হবে না। হবে না কোনো পরীক্ষাও।

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষ একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।