বিশেষ বন্দীর মর্যাদায় খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

আদালতের আদেশের পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রোববার কারাগারে প্রথম শ্রেণির বিশেষ বন্দীর মর্যাদা (ডিভিশন) দেওয়া হয়েছে। তাঁর জন্য কারাগারে সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক ও একজন নার্স রাখা হয়েছে।

খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেওয়ার জন্য রোববার সকালে তাঁর আইনজীবীরা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এ আবেদন করেন। আদালত কারা কর্তৃপক্ষকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর কারাবিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে প্রথম শ্রেণির বিশেষ বন্দীর মর্যাদা (ডিভিশন) দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে আমরা কিছু সুবিধা দিয়েছিলাম। আদেশের পর যা কিছু বাকি আছে, তা আমরা করে দিয়েছি। আদেশ অনুসারে তিনি খাট, ফ্যান, টিভি, সংবাদপত্র-সব পাবেন। যদিও ওইগুলো আমরা আগেই দিয়েছি।’

অবশ্য এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, কারাবিধিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ডিভিশন পাওয়ার কথা উল্লেখ নেই। তিনি বলেন, ‘জেল কোড অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে সাধারণ বন্দী হিসেবেই রাখা হয়েছে। জেল কোড অনুসারে প্রাথমিক রিকমেন্ডেশন কোর্ট থেকেই আসবে। কোর্ট থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয় সরকার। ৮ ফেব্রুয়ারি কোর্টের রায়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, যে কারণে তাঁকে ৮ তারিখ থেকে সাধারণ বন্দী হিসেবেই রাখা হয়েছে।’

অবশ্য রাতে কারা মহাপরিদর্শক খালেদা জিয়ার ডিভিশন পাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

বেলা সোয়া তিনটার দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে পাঁচজন আইনজীবী ডিভিশন-সংক্রান্ত আদালতের আদেশের কাগজপত্র নিয়ে কারা অধিদপ্তরে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের ডিভিশন-সংক্রান্ত আদালতের আদেশ কারা অধিদপ্তরে জমা দিয়েছেন। জেল কোডের ৬১৭ ধারা অনুসারে খালেদা জিয়ার ডিভিশন মঞ্জুর করা হয়েছে। তিনি অসুস্থ ও বয়স্ক হওয়ায় আদালত তাঁর গৃহপরিচারককে সঙ্গে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ফাতেমাকে এক ঘণ্টা পর ফেরত পাঠানো হয়
কারা মহাপরিদর্শক সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে যেদিন কারাগারে পাঠানো হয়, ওই দিন তাঁর গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগমকেও পুলিশ কারাগারে দিয়ে যায়। এর এক ঘণ্টা পর ফাতেমাকে ফেরত পাঠানো হয়। তবে খালেদা জিয়ার জন্য সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক ও একজন নার্স আছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও প্রথম আলোকে বলেন, ফাতেমাকে কোনোভাবেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাখা যাবে না। এর কোনো বিধান নেই। তাঁকে থাকতে হলে কয়েদি হিসেবে থাকতে হবে। এভাবে থাকতে হলে ফাতেমাকে স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা দিয়ে থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কাশিমপুর কারাগারের একজন নার্সকে দিয়েছি। এ ছাড়া চারজন নারী কারারক্ষী তাঁর সেবায় নিয়োজিত আছেন।’

বাইরের খাবার অনুমোদন করা হয় না
রোববার দুপুরে সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। কারাবিধি অনুসারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে খালেদা জিয়া ডিভিশন পাবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ১৮৬৪ সালের জেল কোডে এ ধরনের কথা নেই। ২০০৬ সালের জেল কোডের ৬১৭-এর উপধারায় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স আছে। সেখানে সাবেক প্রেসিডেন্টের কথা আছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ নেই। সেখানে বলা আছে, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্য অথবা সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদকের কথা। কিন্তু খালেদা জিয়া বা তাঁর দল এখন সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন না।

খালেদা জিয়ার খাবার প্রসঙ্গে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ‘বাইরে থেকে কোনো খাবার অ্যালাউ করা হচ্ছে না। সাধারণ বন্দীদের ক্ষেত্রে শুকনো খাবার, ফলমূল অ্যালাউ করা হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁর স্বজনেরা ফলমূল নিয়ে এসেছেন, সেগুলো অ্যালাউ করা হয়েছে। আর জেল কোড অনুযায়ী যে ধরনের খাবার দেওয়ার কথা, সেগুলোই দেওয়া হচ্ছে।’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিকিৎসা মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। সাধারণ বন্দীর জন্য যতটুকু প্রযোজ্য, ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর জন্যও ততটুকু প্রযোজ্য। চিকিৎসার বিষয়ে কোনো পার্থক্য নেই। একজন চিকিৎসক ও একজন ডিপ্লোমা নার্স সার্বক্ষণিক আছেন। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে বাইরে থেকেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা হবে।
খালেদা জিয়া কয়েদির পোশাকে আছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, জেল কোড অনুযায়ী কয়েদির পোশাক পরার কথা।

নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা করে সেখানে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কারাপ্রধান বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিশেষ কারাগারে রাখা হয়েছে। সরকার এ কারাগার এখন পর্যন্ত পরিত্যক্ত ঘোষণা করেনি। এটাকে এখনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে এখানে রাখা হয়েছে।