দোষী সবার ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর রূপা খাতুন ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মানবন্ধন চলছে।
টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর রূপা খাতুন ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মানবন্ধন চলছে।

টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর চাঞ্চল্যকর রূপা খাতুন ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন চলছে। আজ সোমবার এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য আছে।

অভিযোগ গঠন থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত এ মামলার পেছনে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ১৪ কর্মদিবস। টাঙ্গাইলের আইন অঙ্গনের ইতিহাসে এই প্রথম এ ধরনের একটি মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত সময়ের মধ্যে হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়ার আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হবে। 

আজ সকাল ১০টা থেকে টাঙ্গাইলের মানবাধিকার আইনজীবী পরিষদ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এই মানববন্ধন থেকে এই নৃশংস ঘটনায় অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি করেন বক্তারা।

গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে বহুজাতিক কোম্পানির কর্মী রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। 

আদালত সূত্র জানায়, গত ২৯ নভেম্বর এই মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর গত ৩ জানুয়ারি মামলার বাদী মধুপুরের অরণখোলা ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামের সাক্ষীর মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব শুরু হয়। পরে আট কর্মদিবসে বিচারিক হাকিম, চিকিৎসক, তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে চার কর্মদিবসে আসামিদের পরীক্ষা এবং উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

টাঙ্গাইলের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান বলেন, টাঙ্গাইলে তো বটেই, সারা দেশেও সম্ভবত এত দ্রুত সময়ে কোনো মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। এটি আইন অঙ্গনে একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আজাদ বলেন, এভাবে মামলার নিষ্পত্তি হলে মানুষের আদালতের প্রতি আস্থা বাড়বে। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সহায়ক হবে। 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি এ কে এম নাছিমুল আক্তার বলেন, মামলায় সাক্ষীরা ঘটনা আদালতে প্রমাণ করতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হয়েছে।


আসামিপক্ষের আইনজীবী শামীম চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আশা করি, আসামিরা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।’

নিহত রূপার ভাই হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হওয়ায় তাঁরা সন্তুষ্ট। শুধু তাঁদের পরিবার নয়, পুরো দেশবাসী আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে এই আশায় রয়েছে। 

গত ২৫ আগস্ট রাতেই পুলিশ রূপার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে রূপার মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন। রূপার ভাই ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় এসে লাশের ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫) এবং চালকের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) গ্রেপ্তার করে। তাঁরা পাঁচজনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানা যায়।