সাতকানিয়ায় এক মাসে চার খুন

গত ৪ জানুয়ারি দুপুরে ছদাহা এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছ কাটতে গিয়ে প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাতে আহত হন স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ ফারুক (২১)। নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রাতেই মারা যান তিনি। পরের দিন ৫ জানুয়ারি গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। গত ১৬ জানুয়ারি নিহতের খালু আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
জানুয়ারি মাসে চারটি আলাদা ঘটনায় চার ব্যক্তি খুন হয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলায়। চারজনের মধ্যে একজন খুন হয়েছেন রাজনৈতিক কারণে। একজন মুঠোফোনের লোভে বন্ধুদের হাতে, একজন বাগানের গাছ দখল করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় ও আর একজন অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তের গুলিতে। এভাবে এক মাসে চার খুনের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে। আসামিদের ধরতে পুলিশের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা।
জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে দামি মুঠোফোনের লোভে বন্ধুরাই নৃশংসভাবে খুন করে গারাঙ্গিয়া এলাকার কিশোর মোহাম্মদ ফরহাদকে (১৪)। এলাকার লোকজন পরের দিন ভোরে স্থানীয় হাতিয়ার খালের পাড়ে তার গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মো. পারভেজ তিন জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। ওই দিনই স্থানীয় লোকজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত মোজাম্মেল হক (১৮) নামে ফরহাদের এক বন্ধুকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
গত ১৯ জানুয়ারি দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির কাছেই অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হন পুরানগড় এলাকার পুস্তক ব্যবসায়ী মো. জিয়াউর রহমান (৩২)। এ ব্যাপারে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী নাছিমা আক্তার। এ ব্যাপারে কোনো রহস্য বের করতে পারেননি পুলিশ।
নাছিমা আক্তার বলেন, ‘কেন এবং কারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে বলতে পারছি না। তবে পুলিশ চেষ্টা করলে খুনিদের ধরতে পারবে। আমি চাই খুনিরা গ্রেপ্তার ও শাস্তি পাক।’
এদিকে ২১ জানুয়ারি রাতে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা অপহরণের পর গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন করেছেন এওচিয়া ইউনিয়নের চূড়ামণি এলাকার যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ আলমগীরকে (৩৫)। এ ঘটনায় আলমগীরের বাবা মো. নুরুল ইসলাম ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এজাহারভুক্ত একজন আসামিকে কেবল গ্রেপ্তার করতে পেরেছে।
সাতকানিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবদুল মান্নান বলেন, গত বছরের পুরো সময়টাই রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্য দিয়ে পার করেছেন সাতকানিয়াবাসী। বছরের শুরুর মাসেই চারজন খুনের ঘটনা এলাকাবাসীকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রশাসনকে বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার।
পুরানগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ হোসেন সিকদার বলেন, খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে না পারলে অপরাধীরা আগামী দিনেও খুনখারাবির মতো অপরাধ করতে কুণ্ঠিত হবে না।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ হোসেন গত জানুয়ারি মাসে উপজেলায় চারজন খুন হওয়ার কথা স্বীকার করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘খুনিরা রাতের অন্ধকারে গুপ্তভাবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর মধ্যে তিনটির বিষয় আমরা চিহ্নিত করেছি, কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এত বড় থানা দেখাশোনা করার মতো লোকবল আমাদের নেই। তার পরও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে।’