দুই লাখ টাকা চাঁদার জন্য?

>
  • চাঁদার দাবিতে কবীরকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ স্বজনদের।
  • চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার পুলিশের।
  • জামিনের খরচ মেটাতে মায়ের অলংকার বিক্রি করছেন কবীরের ভাইবোনেরা।

কোনো মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না জুরাইনের কবীর হোসেন। তবু এক বছর আগের একটি রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে যেতে হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে চলমান ধরপাকড়ের চক্করে ৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

তবে স্বজনদের অভিযোগ, শ্যামপুর থানা-পুলিশের দুই লাখ টাকা ‘চাঁদা’র দাবি মেটাতে না পারায় কবীরকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন জামিনের জন্য আইনজীবীর খরচ মেটাতে ভাঙারি দোকানদার কবীর হোসেনের ভাইবোনেরা মায়ের সোনার অলংকার বিক্রি করে দিয়েছেন। মূল্যবান আর যা ছিল, সব বন্ধক রেখেছেন। কবীরের এক ভাই হকার, বাবা রাজমিস্ত্রির জোগালি। তিনজনে মিলে কোনো রকমে সংসার চালান।

গতকাল বুধবার কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কবীর হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে যান তাঁর স্বজনেরা। সেখানেই তাঁদের সঙ্গে কথা হয়। কী অভিযোগে কবীরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে কবীরের এক স্বজন প্রথম আলোকে বলেন, কবীর কোনো অন্যায় করেননি। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পুলিশের চাঁদা মেটাতে না পারায় তিনি এখন কারাগারে। পুলিশি হয়রানি এড়াতে ওই স্বজন নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

কথা বলে জানা গেল, ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সাদাপোশাকে পুলিশ কবীরের খোঁজে তাঁদের জুরাইনের বাসায় যায়। নিজেকে কবীরের বন্ধু পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, কবীর একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। টাকাটা ফেরত দিচ্ছেন না। এ নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। তিনি মধ্যস্থতা করতে এসেছেন। কবীর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ওই ব্যক্তিকে বলেন, তিনি ধাপে ধাপে টাকাটা ফিরিয়ে দেবেন। এ নিয়ে আর কোনো ঝামেলা নেই। পরে সাদাপোশাকে পুলিশ তাঁকে বেরিয়ে আসতে বলে। বের হওয়ার পরপরই তাঁকে শ্যামপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ভাই তারিক হোসেনও থানায় যান। সেখানে পুলিশ তাঁদের দুজনকেই বেদম পেটায় ও দুই লাখ টাকা চাঁদা চায়। পরে ২০ হাজার টাকা দিলে পুলিশ তারিককে ছেড়ে দেয়।

কবীর হোসেনের বোন লাকি বেগম বলেন, এলাকার লোকজনের কাছ থেকে তাঁরা শুনেছেন কবীর হোসেন ফেসবুকে বিএনপির চেয়ারপারসনের পক্ষে মন্তব্য বা ছবি শেয়ার দিয়েছিলেন। তবে তাঁর ভাইয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, এমন কথা তিনি কখনো শোনেননি। পরে কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ মে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় তাঁকে পলাতক আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। জানতে চাইলে শ্যামপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘এজাহারভুক্ত নয় তো কি হয়েছে? এজাহারে তো থাকে দু-চার-পাঁচজনের নাম। সে হয়তো অজ্ঞাতনামা, পলাতক আসামি ছিল।’ তিনি পুলিশের চাঁদা দাবির অভিযোগও অস্বীকার করেন।