'আমাদের প্রাপ্যটা আমাদেরকে দিন'

পিআইবি মিলনায়তনে গতকাল পত্রিকা ও টেলিভিশনের সম্পাদক, মালিক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সভা শেষে তাঁদের প্রশ্নের জবাব দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পাশে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।  ছবি: প্রথম আলো
পিআইবি মিলনায়তনে গতকাল পত্রিকা ও টেলিভিশনের সম্পাদক, মালিক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সভা শেষে তাঁদের প্রশ্নের জবাব দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পাশে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ছবি: প্রথম আলো

নাছোড়বান্দা সাংবাদিকদের কোনোভাবেই এড়াতে না পেরে, অনেকটা বাধ্য হয়ে মন্ত্রীরা দাঁড়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন—সংবাদকর্মীদের বের করে দিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা গণমাধ্যমের সম্পাদক ও মালিকদের সঙ্গে কী আলোচনা করলেন?

জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বললেন, ‘এখানে কোনো নির্দেশনা দেওয়ার বিষয় ছিল না। সুশাসনের জন্য সরকার ও গণমাধ্যমের মধ্যে সহযোগিতা দরকার। তা ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ গণমাধ্যমের কিছু সমস্যা আছে। এসব নিয়ে সবাই মন খুলে কথা বলেছেন।’

বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) মিলনায়তনে ওই সভা শেষে মূল ভবনের গেটে দাঁড়িয়ে সেতুমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় সেখানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু উপস্থিত ছিলেন। আর সভায় তাঁদের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং ভারপ্রাপ্ত তথ্যসচিব নাসিরউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

পত্রিকা ও টেলিভিশনের সম্পাদক, মালিক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের এই সভায় ডেকেছিল তথ্য মন্ত্রণালয়। যখন দেখা গেল সভায় সেতুমন্ত্রীও আছেন এবং সভার শুরুতে সংবাদকর্মীদের না থাকার জন্য বলা হচ্ছে, তখন সভার সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয় নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। সভা শেষে জানানো হয় সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হবে না। তখন সংবাদকর্মীরা ভবনের নিচের গেটে অবস্থান নেন। তবে সেখানে মন্ত্রীরা বিস্তারিত কিছু বলেননি।

পরে সভার সূত্রগুলো জানায়, সেতুমন্ত্রী সরকার ও গণমাধ্যমের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আমরা কিছু করব না। আমাদের খবর কোথায় কতটুকু দেবেন, তাও আপনাদের বিবেচনা। আমরা শুধু বলব, যার যেটুকু প্রাপ্য তাকে তা দেবেন। আমাদের প্রাপ্যটা আমাদেরকে দিন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের হয়তো কিছুটা দূরত্ব হয়েছে। এটা কমাতে হবে। কমানো সম্ভব। গণমাধ্যম সরকারের শত্রু বা প্রতিপক্ষ নয়। গণমাধ্যমের প্রতি আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অভ্রান্ত নই। ভুল করতে পারি। ভুল সংশোধনও করতে পারি। আমরা অভিযোগ তখনই করি, যখন সত্যকে ভুল এবং ভুলকে সত্য বলার প্রবণতা দেখি।’

টেকনাফের সাংসদ, ঘাটাইলের সাংসদ, শাহজাদপুরের মেয়র, বগুড়ার তুফান সরকার প্রমুখের নাম উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘দলীয় অনেক নেতা অপরাধ করে পার পাননি। অপরাধী কেউ রেহাই পাবেনও না। আমাদের মধ্যে সংশোধনের চেষ্টাও আছে। কিন্তু এ জন্য কোনো প্রশংসা পাই না। আপনারা যদি ঢালাওভাবে আক্রমণাত্মক জার্নালিজম করেন, তাহলে কষ্ট পাই।’

আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল না উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে পাকিস্তানি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেখান থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। এরশাদের সঙ্গে জোট করার সমালোচনা করা হয়। এটা একটা কৌশলগত জোট।’

সভায় তথ্যমন্ত্রী দেশে সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও রেডিওর অভূতপূর্ব প্রসারের চিত্র তুলে ধরে বলেন, গণমাধ্যম সক্রিয় থাকা উন্নয়নের জন্য জরুরি।

সম্পাদক ও মালিকদের পক্ষ থেকে অনেকেই বক্তব্য দেন বলে সভার সূত্র জানায়। তাঁরা বলেন, গণমাধ্যমের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মান বাড়েনি। গণমাধ্যমের অনেক সমস্যা রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে তাঁরা বলেন, গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার জন্য এই আইন করা হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া দরকার।

মন্ত্রীরা আলোচনার এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। সভায় প্রধান প্রধান পত্রিকা, সংবাদ সংস্থা, টেলিভিশন ও রেডিওর সম্পাদক, মালিক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।