নদীর ভেতরে বাড়ি

ঢাকার নবাবগঞ্জে ইছামতী নদীর পাড়ে নির্মিত ভবন।  ছবি: প্রথম আলো
ঢাকার নবাবগঞ্জে ইছামতী নদীর পাড়ে নির্মিত ভবন। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় ইছামতী নদীর জায়গা দখলে নিয়ে দোতলা ভবন নির্মাণ করছেন মাজেদুর রহমান নামের স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। স্থানীয় শিকারীপাড়া ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদের চেয়ারম্যান আলিমুর রহমান খান তাঁকে এই কাজে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাজেদুর রহমান আদম ব্যবসায়ী। প্রাসাদতুল্য ভবনটি নদীর প্রায় ১৫ শতাংশ জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। এখনো ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। তবে মাজেদুরের দাবি, নিজের কেনা জমিতেই ভবন নির্মাণ করছেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিকারীপাড়া মৌজার সাড়ে ৮ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন আক্কাস আলী। আক্কাস মারা গেছেন। ২০০১ সালের দিকে তাঁর জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ২০১২ সাল নাগাদ তাঁর ওয়ারিশদের কাছ থেকে এই সাড়ে ৮ শতাংশ জমি কিনে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মাজেদুর রহমান। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর জমিটি নিজের নামে নামজারি করেছেন মাজেদুর। একই বছরের শুরুর দিকে তাঁর ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

বাংলাদেশের ভূমি আইনে বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তির রেকর্ডীয় জমি নদীতে ভেঙে যায়, তবে সেই জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে সিকস্তি হয়ে যায়। তখন জমিটির মালিকানা সরকারের ওপর বর্তায়। সেই আইন অনুযায়ী, মাজেদুর রহমানের জমিটি সরকারের। কিন্তু মাজেদুর প্রায় ১৫ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে ভবন নির্মাণ করছেন। এই ভবনে হিন্দু সম্প্রাদয়ের শ্মশানের কিছু জায়গাও আছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় শ্মশান কমিটির একাধিক ব্যক্তি। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, ‘মাজেদ যখন আমাদের শ্মশানের কিছু জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করেন, আমরা তাতে বাধা দিই। এতে তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। আমরা তখন ইউপি চেয়ারম্যান আলিমুর রহমানের কাছে সমাধান চাই। তিনি ঘটনাস্থলে এসে উল্টো মাজেদকে প্রাচীর নির্মাণে সহায়তা করেন।’

স্থানীয় নৃপেন হালদার অভিযোগ করেন, ‘মাজেদুরের সম্পত্তি হচ্ছে সাড়ে ৮ শতাংশ। কিন্তু তিনি জবরদখল করে শ্মশান, নদীর জায়গাসহ প্রায় ৩০ শতাংশ জায়গা ভোগদখল করছেন। এ বিষয়ে আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

শিকারীপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, মাজেদুর চেয়ারম্যানের লোক। তাই তিনি ইছামতী নদী ও হিন্দুদের শ্মশান দখলে নিতে মাজেদুরকে সহায়তা করেছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আলিমুর রহমান খান নদীভাঙনের কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে নদীর প্রস্থ ছিল ৮০ ফুট। ভাঙতে ভাঙতে এখন প্রস্থ হয়েছে ৩০০ ফুট। তবে জমিটি মাজেদুরের কেনা।’ নদী ও শ্মশান দখলে সহায়তার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাজেদুর নদী দখল করেননি। আমিও তাঁকে কোনো সহায়তা করিনি।’

যোগাযোগ করলে মাজেদুর রহমান গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি নদী দখল করলে বিষয়টি নদী কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ দেখবে। আপনাকে আমার জবাব দিতে হবে কেন।’

শিকারীপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবুল হাশেম ফয়েজি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রেকর্ডীয় সম্পত্তি নদীতে ভেঙে গেলে সেই সম্পত্তি আর ব্যক্তিমালিকানাধীন থাকে না। সেটি নদী ভাঙা আইনে সিকস্তি হয়ে যায়। সিকস্তি জমির সংশোধন না করে জমির ওপর কেউ যদি স্থাপনা তৈরি করে, তবে তা অবৈধ।

বাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নদী বা খাল দখলের এখতিয়ার কারও নেই। যদি কেউ এটা করে থাকে, সরেজমিনে পরিদর্শন করে উচ্ছেদ করা হবে।