বর্ণের রঙের মেলা রাজশাহীতে

বর্ণমেলায় খুদে শিল্পীদের পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
বর্ণমেলায় খুদে শিল্পীদের পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

বর্ণের রঙের মেলা বসেছে আজ রাজশাহীতে। সকাল নয়টায় বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক মামুন হুসাইন। শ্রী সংগীতালয়ের শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানের সঙ্গে অতিথিরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

সার্ফ এক্সেল-প্রথম আলোর উদ্যোগে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজ মাঠে তৃতীয়বারের মতো এই বর্ণমেলার আয়োজন করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি রহমান রাজু, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইকবাল মতিন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল মান্নান সরকার, রাজশাহী জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সরকার ও কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নূর জাহান বেগম।

মামুন হুসাইন বলেন, ‘আমাদের বাংলা ভাষা রক্তাক্ত মানুষ, রক্তাক্ত জনপদের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। ভাষার মৃত্যু মানে সেই জনপদের মৃত্যু। ছোটদের বইতে পড়ানো হয় অ তে অজগর ওই আসছে তেড়ে। ভাষার সেই ‘অজগর’ এখন চারিদিক থেকে ছড়িয়ে পড়ছে। তাকে প্রতিরোধ করতে হবে। ভাষাকে ভাবতে হবে চর্চা করতে হবে। আমাদের বরেন্দ্র অঞ্চলে যে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী আছে তাদের ভাষার প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে।’

রহমান রাজু বলেন, বাংলাদেশের প্রথম অক্ষর ‘ব’ আর বর্ণমেলারও প্রথম অক্ষর ‘ব’। বর্ণমালাকে রক্ষা করার, বুকে ধারণ করবার যে আন্দোলন হয়েছিল সেই একুশে ফেব্রুয়ারি আজকের এই দিনে আমরা আজ অন্তত সারা দিন বাংলায় কথা বলব।

ইকবাল মতিন বলেন, বর্ণ দুই ধরনের। একটা অক্ষর আরেকটা হলো রং। সেই বর্ণের রঙের মেলা বসেছে আজ রাজশাহীতে। অনেক কষ্টে পেয়েছি আমাদের এই মাতৃভাষা। আজ শুধু আনন্দ ভাষাকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। আর সঠিক উচ্চারণ করতে হবে।

বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা যাই করি না কেন, বাংলা ভাষার মান মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। আজকের প্রজন্মকে বাংলা ভাষার চর্চা শেখাতে হবে। এ জন্য বাংলা ভাষার মধ্যে ইংরেজি ভাষা ঢোকানো যাবে না।

অনুষ্ঠানে একদিকে চলতে থাকে স্কুল পরিবেশনা অন্যদিকে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা। রাজশাহীর প্যারামাউন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বর্ণিল সাজে সেজে জারিগান পরিবেশন করে। কলেজিয়েট স্কুল দল ভাষা নিয়ে সমবেত সংগীত ও নৃত্য, রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নৃত্য, সংগীত, ও আবৃত্তি এবং সরকারি পিএন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করে। একুশ আমার অহংকার শিরোনামে মাতৃভাষা নিয়ে বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদ।

অনুষ্ঠানে ল্যাডলী মোহন মৈত্রের নেতৃত্বে ধ্রুপদালোক এর শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করে। বেলা সাড়ে ১১টায় মাথল রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা নিয়ে আসে। মেলায় চলছে বর্ণদোলা, শিশুরা রঙে রঙিন করে তুলেছে বর্ণ। চলছে হাতে খড়ি ও বর্ণপ্রদর্শনী। ভিড় জমেছে, কিশোর আলো বিজ্ঞান চিন্তা ও প্রথমার স্টলে। সবচেয়ে লম্বা সারি ছিল বর্ণায়নের স্টলের সামনে।