কাজের ও থাকার পরিবেশ ভালো নয় মালয়েশিয়ায়

মালয়েশিয়া থেকে গত সাত বছরে দুই হাজার ৫৪৩ জন প্রবাসীর লাশ এসেছে। সৌদি আরবের পর লাশের সংখ্যার দিক থেকে এটি দ্বিতীয়।
মালয়েশিয়াপ্রবাসীরা বলছেন, এখানকার আবহাওয়া মোটামুটি ভালো হলেও বেশির ভাগ কারখানায় কাজের পরিবেশ ভালো নয়। দিনরাত অমানবিক পরিশ্রম করতে হয়। খরচের টাকা তোলার জন্য অনেকে দিনে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করেন। এ ছাড়া কাজ শেষে কারখানার পেছনে বস্তির মতো গাদাগাদি করে থাকেন প্রবাসীরা। অতিরিক্ত কাজের চাপ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, বাড়িতে টাকা পাঠানোর চাপ—এসব কারণে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে মালয়েশিয়া থেকে ২১৬ জন, ২০০৮ সালে ৪১১, ২০০৯ সালে ৪৭২, ২০১০ সালে ৩৬১, ২০১১ সালে ৩৫৬, ২০১২ সালে ৩৪০ এবং ২০১৩ সালে ৩৮৭ জন প্রবাসীর লাশ এসেছে।
সিরাজগঞ্জের মোহাম্মদ হোসেন (৩২) গত ১৫ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাঁর বড় ভাই আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্ট্রোকে মারা যাওয়ার কথা বলা হলেও কেন স্ট্রোক হলো, তা তাঁরা জানতে পারেননি।
৩২ বছর বয়সে মালয়েশিয়ায় গিয়ে এক মাসের মাথায় স্ট্রোকে মারা যান আসাদ উল্লাহ পাঠান। নরসিংদীর রায়পুরায় তাঁর বাড়ি। আসাদের বড় ভাই শাহজাহান বলেন, যাওয়ার এক মাসের মধ্যেই কীভাবে স্ট্রোক করল, তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।
একইভাবে হঠাৎ স্ট্রোকে মারা গিয়ে লাশ হয়ে ফেরেন সিরাজগঞ্জের ওসমান শেখ (৩৭), কুমিল্লার মজিবুর রহমান (৩৮) ও রংপুরের মিঠাপুকুরের রফিকুল ইসলাম (৩৬)। এই পরিবারগুলোও জানে না কেন, কীভাবে স্ট্রোকে আক্রান্ত হলেন তাঁরা।
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মন্টু কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রতি মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন বাংলাদেশি শ্রমিক মারা যান। এঁদের অধিকাংশই মারা যান হূদেরাগে। কেন মারা যান, সেটি আসলে গবেষণা করা দরকার। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হয়, কষ্টের কাজ, দীর্ঘদিন পরিবার থেকে দূরে থাকা—এগুলোই মূল কারণ। তিনি প্রবাসীদের প্রতি পরামর্শ দেন, সামান্য অসুস্থ বোধ করলেই তাঁরা যেন সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তাহলে হয়তো প্রাথমিকভাবেই রোগ চিহ্নিত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠবেন।