নারীর ক্ষমতায়নে যেতে হবে আরও দূর

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন করতে চাইলে নারী উন্নয়নের বিকল্প নেই। নারীকে বাদ দিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নের কথা কেউ ভাবলে তা হবে বোকার স্বর্গে বাস করার মতো। দেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে নারীকে বাড়তি কিছু সুযোগ দিতে হবে।
বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতনকে নারী উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দেন। একইভাবে নারীদের বিষয়ে সমাজের নেতিবাচক মনমানসিকতা পরিবর্তনেও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল রোববার প্রথম আলো আয়োজিত ‘সর্বত্র নারীর আরও উন্নয়ন ও অংশগ্রহণ চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহায়তায় এ গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
মেহের আফরোজ শহুরে নারীর পাশাপাশি গ্রামীণ নারী যাতে কোনোভাবেই পিছিয়ে না থাকেন, সে দিকটিতে নজর দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের দুই কোটি নারী যাতে ঘরে বসে উপার্জন করতে পারেন, সে জন্য ইনকাম জেনারেটিং প্রোগ্রামের আওতায় ১৮টি ট্রেডে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারীদের যাতায়াত ভাতাও দেওয়া হচ্ছে। এ মন্ত্রণালয় থেকে নারীদের শুধু সেলাই-ফোঁড়াই নয়, মোবাইল ফোনে অর্থ উপার্জন, ড্রাইভিং, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।

গোলটেবিল বৈঠকে গতকাল বক্তব্য দেন মেহের আফরোজ। পাশে নাসের ​এজাজ।  প্রথম আলো
গোলটেবিল বৈঠকে গতকাল বক্তব্য দেন মেহের আফরোজ। পাশে নাসের ​এজাজ। প্রথম আলো

গোলটেবিল বৈঠকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে, তা অনেক দেশেই অনুপস্থিত। তবে এই ক্ষমতায়ন সর্বস্তরে হয়নি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর উপস্থিতি এখনো অনেক কম। তাই যেতে হবে আরও বহুদূর। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়কে একসঙ্গে কাজ করা এবং নারী উন্নয়নে সরকারের যে আইনগুলো আছে, তার বাস্তবায়নের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন তিনি।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের নেতৃত্ব বাড়াতে হলে প্রথমত নারীদের মধ্যে যে সংকোচ কাজ করে, তা ঝেড়ে ফেলতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পারিবারিকভাবে একটি স্তর পর্যন্ত নারীর অংশগ্রহণ সম্ভব, তবে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাতে হলে নারীর সক্ষমতাও থাকতে হবে।
পোশাকশিল্পের নারী শ্রমিকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন কসমেটিকসের প্রধান ক্রেতা এই নারী শ্রমিকেরা। এ খাতের অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন দিকে সরকার নজর দিলে ভবিষ্যতেও এ খাতে নারীদের অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।
আলোচনায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কান্ট্রি হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিটপী দাশ চৌধুরী বলেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। আর এ প্রতিষ্ঠানে কোনো কর্মী যাতে জেন্ডার বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে ঝরে না যান, সে জন্য জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলছে।