মাদক কর্মকর্তারা নজরদারিতে

যে জেলায় মাদক মামলা বা অভিযানের সংখ্যা কম হবে, সেই জেলার মাদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে মামলার সংখ্যা বেশি দেখানোর প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া যাবে না, নিলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা। গত রোববার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ সমন্বয় সভার বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ২৮ জন মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সঠিকভাবে তাঁদের কাজ না করায় এবং অভিযোগ থাকায় তাঁদের শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে বিশেষ অভিযান চালানো হবে বলে ঠিক করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ঠিক করেছে, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা, কাজ ও সততা বিবেচনা করেই বদলি ও পদোন্নতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া যদি কেউ বদলির জন্য মন্ত্রী বা সচিবের কাছে বারবার তদবির করেন, তবে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। এই কর্মকর্তাদের সংশোধনের জন্য দুই মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বেশিসংখ্যক অভিযান পরিচালনা করেছেন অথচ মামলা কম দেখিয়েছেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, যাদের গ্রেপ্তার করা দরকার, তাদের গ্রেপ্তার করছেন না মাদক কর্মকর্তারা। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের বেশির ভাগ হয় বহনকারী, নয় সেবক। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ী ও মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তাই মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে অভিযান ও মামলার সংখ্যা বাড়াতে বলেছে মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয় মাদকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ জন্য মাদকের কর্মকর্তাদেরও হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। সচিব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাদক কর্মকর্তারা সঠিকভাবে মাদকবিরোধী অভিযান করছেন না, মাদক-সংক্রান্ত মামলাও কম করছেন। ভোলায় গত ছয় মাসে মাত্র একটি মামলা হয়েছে, তা-ও সেটি ৫০ গ্রাম মাদক বহনের অভিযোগে মামলা। অন্যদিকে মানিকগঞ্জ জেলায় ২৭৩ জনের নাম মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় ছিল। কিন্তু অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাত্র তিনজনকে পেয়েছেন, অন্যদের পাননি। এসব কথা কোনোভাবেই মানা যায় না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে বলে জানান সচিব।

জানা গেছে, রোববারের মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ সমন্বয় সভায় কোন কর্মকর্তা কয়টি অভিযান চালিয়েছেন, কয়টি মামলা করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাওয়া হয়। অভিযানে গেলে কর্মকর্তাদের অবশ্যই তা খাতায় লিপিবদ্ধ করে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় সভায়। পরিচালক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মাসে অন্তত দুটি জেলায় ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ করতে বলা হয়। এ ছাড়া সিদ্ধান্ত হয়, কমিশনারদের সঙ্গে দুই মাস পরপর বৈঠক করা হবে। আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক, চোরাচালান কমিটির বৈঠকসহ সব বৈঠকে মাদককে আলোচনার তালিকায় রাখতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু গোয়েন্দাদের তালিকা দিয়েই মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের অভিযান পরিচালনা চলবে না। সব তালিকা একত্র করে যাদের নাম সব তালিকায় থাকবে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জবাবদিহি বাড়াতে জেলা প্রশাসকদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পরিদর্শন করে কর্মকর্তাদের কার্যক্রম মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।