চার বছর পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন

>
  • অবনি বাকতি কমলগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী চা-বাগানের শ্রমিক ছিলেন।
  • ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারি রাস্তার পাশে অবনির লাশ পাওয়া যায়।
  • একই বাগানের অনন্ত বাকতির ছেলে রদিপ বাকতি গ্রেপ্তার।

চার বছর পর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী চা-বাগানের শ্রমিক অবনি বাকতির হত্যারহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অবনি বাকতি ফুলবাড়ী চা-বাগানের মৃত নিতাই বাকতির ছেলে। হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পিবিআই একই বাগানের অনন্ত বাকতির ছেলে রদিপ বাকতিকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে পিবিআই মৌলভীবাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যারহস্য উদ্‌ঘাটনের কথা জানায়। এতে লিখিতভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেন পিবিআই মৌলভীবাজার কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, অবনি বাকতি কমলগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী চা-বাগানের একজন নিয়মিত চা-শ্রমিক ছিলেন। ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারি ফুলবাড়ী চা-বাগানের মন কুচিকুচি এলাকার একটি সরু রাস্তার পাশে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। পরদিন ৪ জানুয়ারি অবনি বাকতির চাচাতো বোনের স্বামী সুরেশ বাকতি বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ ফুলবাড়ী চা-বাগান থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। গ্রেপ্তার তিনজন পরে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
পুলিশ পরপর তিনবার এই ঘটনা তদন্ত করে এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আরও দুবার তদন্ত করে। সিআইডিও কোনো কারণ উদ্‌ঘাটন করতে না পেরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
এদিকে আদালত মামলাটির অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিলে পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক সুমন কুমার চৌধুরী গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। সুমন কুমার চৌধুরী তদন্তকাজের একপর্যায়ে গত ২৬ জানুয়ারি জাতিসংঘ মিশনের জন্য মনোনীত হলে পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম মামলাটির তদন্তভার নেন। পিবিআইয়ের এই দুই কর্মকর্তার তদন্তে হত্যার প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসে।
পুলিশ প্রাপ্ত সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে হত্যাকাণ্ডের মূল সন্দেহভাজন ফুলবাড়ী চা-বাগানের রদিপ বাকতিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে। রদিপ বাকতি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন, তাঁর এক স্বজনের সঙ্গে অবনি বাকতির অনৈতিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তাঁরা (রদিপ বাকতি ও অবনি বাকতি) একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। ঘটনার মাসখানেক আগে রদিপ বাকতি এই সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিন এ নিয়ে কথাবার্তা হলে রদিপ বাকতি ও রদিপের এক সহযোগীর সঙ্গে অবনি দুর্ব্যবহার করেন। অবনির দুর্ব্যবহারের কারণে রদিপ ও তাঁর আরও দুই সহযোগী এই হত্যাকাণ্ডের সিদ্ধান্ত নেন। ওই দিন রাত ১০টার দিকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অবনিকে কৌশলে ফুলবাড়ী চা-বাগানের ১০ নম্বর সেকশনের মন কুচিকুচি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের মধ্যে তর্ক হয়। একপর্যায়ে তাঁরা অবনি বাকতিকে বেদম মারধর করেন। তাঁর মাথায় আঘাত করা হলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। একপর্যায়ে অবনি বাকতির মৃত্যু নিশ্চিত হলে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
পিবিআই মৌলভীবাজার কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার রদিপ বাকতি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপর দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।