সফরে আসতে চায় নিরাপত্তা পরিষদ

নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে আশ্রয়শিবিরে এক রোহিঙ্গা পরিবার।  ছবি: প্রথম আলো
নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে আশ্রয়শিবিরে এক রোহিঙ্গা পরিবার। ছবি: প্রথম আলো

এ মাসের কোনো একসময় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে আসতে আগ্রহী। জাতিসংঘ আশা করছে, এই সফরের ফলে সংকট সমাধানে অধিক তৎপর হতে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়বে। তবে এই সফর সম্পূর্ণ নির্ভর করছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সম্মতির ওপর। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে মিয়ানমার থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। এ কারণে মিয়ানমার প্রশ্নে একজন জাতিসংঘ প্রতিনিধির নিয়োগ চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।

বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা প্রশ্নে কোনো লক্ষণীয় অগ্রগতি না হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকার প্রশ্নে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এন্ড্রু গিলমোর বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিহত্যা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন করেন এবং উদ্বাস্তুদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। গিলমোর জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে যে বিবরণ তিনি শুনেছেন, তা থেকে স্পষ্ট মিয়ানমারে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা যে সেখানে ফিরে যাবে না, এ ব্যাপারে সব মহলই একমত বলে তিনি জানান। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক এ কথা জানান।

গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মিয়ানমার প্রশ্নে একজন বিশেষ প্রতিনিধির নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এই প্রশ্নে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে দুজারিক জানান, একজন প্রতিনিধি নিয়োগের ব্যাপারে মহাসচিব তাঁর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া মহাসচিব বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জাতিসংঘ আবাসিক দপ্তরের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করছেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মহাসচিব ইতিমধ্যে একজন প্রতিনিধি নিয়োগের ব্যাপারে একটি চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করেছেন। এই তালিকায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও স্কান্ডেনেভিয়ার একাধিক অভিজ্ঞ কূটনীতিক রয়েছেন। জাতিসংঘ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এই সম্ভাব্য প্রার্থীদের কারও ব্যাপারে এখনো মিয়ানমার সরকারের সম্মতি পাওয়া যায়নি, সে কারণে বিশেষ প্রতিনিধির নিয়োগ বিলম্বিত হচ্ছে।

মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৩৭ তম বার্ষিক অধিবেশনে রোহিঙ্গা প্রশ্নটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হবে বলে জানা গেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এই অধিবেশন ২৩ মার্চ পর্যন্ত চলবে। রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার পরিষদ যে তথ্য অনুসন্ধানী দল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে, মিয়ানমারের অসহযোগিতার কারণে তা কার্যকর হতে পারছে না। পরিষদের চলতি অধিবেশনে এই ব্যাপারে নতুন উদ্যোগ আসতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানানো হয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গাসংকটের সূত্রে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বিপুল সংখ্যায় উদ্বাস্তুর আগমন হওয়ায় এই অঞ্চলের বন্য প্রাণীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের সূত্র উদ্ধৃত করে স্তেফান দুজারিক জানিয়েছেন, কুতুপালংয়ে, যেখানে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তা এশীয় হাতির বিচরণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। এই এলাকার অন্তত ৪০ টির মতো হাতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিচরণ করে থাকে। এরই মধ্যে ১০ জনের মতো উদ্বাস্তু এসব হাতির পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছে। শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ ইউনিয়নের সহায়তায় মোট ১৭টি তদারকি দলের মাধ্যমে এই এলাকায় যাতে হাতি ও মানুষ নিরাপদে সহাবস্থান করতে পারে, সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দুজারিক জানান।

টেকনাফে এল আরও ৩৩৩ রোহিঙ্গা
টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে গতকাল কক্সবাজারের টেকনাফে ঢুকেছে আরও ৮৯ পরিবারের ৩৩৩ রোহিঙ্গা। উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখালীতে সেনাবাহিনীর ত্রাণকেন্দ্রের মাধ্যমে তাদের নয়াপাড়া শিবিরে পাঠানো হয়েছে।  বিষয়টি জানিয়েছেন কেন্দ্রে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বরত টেকনাফের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন।