প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে জাসদের দ্বিমত

সাত মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্বে ও পরে সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্য নেতিবাচক উল্লেখ করে দ্বিমত প্রকাশ করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশ। শনিবার দলটির সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এক যৌথ বিবৃতিতে এ দ্বিমত প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস যে ধারাবাহিক প্রয়াস চালিয়েছে তার ফলশ্রুতিতেই ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়ার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বেতার বক্তৃতার সাথে সাথেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাত্র জনতা রাজপথে নেমে স্বাধীনতার রণহুংকার তোলে। ১৯৭১ সালের ১ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত নিউক্লিয়াসের পরিচালনায় স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, ইশতেহার পাঠ, জাতীয় সংগীত নির্বাচন, রাজপথে প্রকাশ্য সামরিক কুচকাওয়াজ ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে জনগণর ইস্পাতসম ঐক্য গড়ে তোলে। ফলে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরু মুহূর্ত থেকেই দ্বিধাহীন চিত্তে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ যার যা আছে, তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’

বিবৃতি বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে দাবি জানানো ও ভাষণের পর তা নিয়ে কথা বলা দেশবাসী তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রযোদ্ধা ছাত্র-তরুণদের দুর্বার আকাঙক্ষারই প্রতিফলন মাত্র। আর ছাত্র-তরুণদের আকাঙক্ষাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সব সময়ই সযত্নে লালন করেছেন। ষাটের দশক থেকে বঙ্গবন্ধু ও নিউক্লিয়াস সংগঠকদের মধ্যে এ ধরনের বহু কথাবার্তা, অনুযোগ, তর্ক-বিতর্ক ঘটেছে- যা কখনও বঙ্গবন্ধু এবং নিউক্লিয়াসের মধ্যে ন্যূনতম চিড় ধরায়নি। এসব কখনই ষড়যন্ত্র ছিল না, ছিল স্বাধীনতার দুর্বার আকাঙক্ষার বহিঃপ্রকাশ। এটা একান্তই বঙ্গবন্ধু ও নিউক্লিয়াস বিশেষ করে সিরাজুল আলম খানের পারস্পরিক বোঝাপড়ার ব্যাপার। নিউক্লিয়াস গঠন থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত এ বন্ধন ছিল অটুট। স্বাধীনতার পরে মত ও পথের ভিন্নতা টেনে এনে সে সম্পর্ককে বিতর্কিত ও কটাক্ষ করা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকেই কেবল অসম্মানিত করে না, ইতিহাসকেও অন্ধকারে ঠেলে দেয়।’

বিবৃতিতে শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক আরও বলেন, ‘এটা অত্যন্ত আশার বিষয় যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস, নিউক্লিয়াসের সাথে বঙ্গমাতা বেগম মুজিবের সম্পর্ক ও নিউক্লিয়াসের প্রাণপুরুষ সিরাজুল আলম খানের সাথে বঙ্গবন্ধুর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিষয়ে আলোকপাত করছেন, যদিও তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে। আমরা আশা করি ইতিহাসের অজানা অধ্যায়গুলো উন্মোচন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে সবার ভূমিকার যথাযথ স্বীকৃতি দেবেন। মুক্তিযুদ্ধে নিউক্লিয়াসের ভূমিকা, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ভূমিকা, প্রবাসী সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদের ভূমিকা, বাঙালি সামরিক বাহিনী সদস্যদের ভূমিকা, সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভূমিকা, বাঙালি কূটনীতিকদের ভূমিকাসহ সকল পক্ষের ভূমিকা মিলিয়েই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। আর নিউক্লিয়াস ছিল ৬ দফা থেকে স্বাধীনতার ১ দফা আন্দোলনে পরিণত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রথম ও প্রধান হাতিয়ার। নিউক্লিয়াস তথা সিরাজুল আলম খানের ভূমিকাকে খাটো করলে তা জাতির জন্ম ইতিহাসকেই খণ্ডিত ও বিপথগামী করবে মাত্র।’