'পরনের জামাটাই খালি আছে'

ঊর্মি আক্তারদের ঘরের একাংশ পুড়েছে। নিজের প্রিয় পুতুলটি পুড়ে গেছে। মিরপুর ১২, ঢাকা, ১২ মার্চ। ছবি: সুহাদা আফরিন
ঊর্মি আক্তারদের ঘরের একাংশ পুড়েছে। নিজের প্রিয় পুতুলটি পুড়ে গেছে। মিরপুর ১২, ঢাকা, ১২ মার্চ। ছবি: সুহাদা আফরিন

পোড়া টিন-কাঠ-আসবাবের মাঝে সিমেন্টের খুঁটিগুলো শুধু মাথা উঁচু করে আছে। আর সব ছাই। পোড়া জিনিস সরিয়ে যে যার মালামাল খুঁজছে। কোথাও কোথাও এখনো ধোঁয়া। রান্না করা তরকারিও পুড়ে বাসনের সঙ্গে লেগে গেছে। আঁখি আক্তারদের ঘর কোনটা ছিল, বোঝার উপায় নেই। মামার সঙ্গে পোড়া টিন সরিয়ে বই খুঁজছিল সে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া আঁখি কিছুই খুঁজে পায়নি। সব পুড়েছে। আঁখির খালা শারমিন আক্তার বলেন, ‘পরনের জামাটাই খালি আছে।’

আজ সোমবার ঢাকার মিরপুর ১২ নম্বরের পল্লবীর ইলিয়াস মোল্লা বস্তিতে গিয়ে এ পরিস্থিতি দেখা যায়। গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটায় আগুন লাগে। সকাল সাতটার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

সব শেষ। পোড়া জিনিসের মাঝে মাথা উঁচু করে আছে শুধু সিমেন্টের খুঁটি। মিরপুর ১২, ঢাকা, ১২ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো
সব শেষ। পোড়া জিনিসের মাঝে মাথা উঁচু করে আছে শুধু সিমেন্টের খুঁটি। মিরপুর ১২, ঢাকা, ১২ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো

অন্যের পুতুল নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হয়। তাই ঊর্মি আক্তারের বাবা একটি পুতুল কিনে দিয়েছিলেন। ঘরের ভেতরে টিনের চালের নিচে বাঁশের ওপরে ছিল পুতুলটি। শেষ রাতের আগুনে তার চিহ্নও নেই। আগুনে বেশির ভাগ ঘরই পুড়ে গেছে।

ঊর্মির বাবা মো. লিটন বলেন, দরজায় লাথির শব্দে ঘুম ভাঙে। বাইরে উঁকি মেরেই দেখতে পান সব জ্বলছে। আগুন ধেয়ে আসছে। ঘরের একাংশ পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস আসাতে কিছু কিছু জিনিস রক্ষা পায়।

ঊর্মির মা ঝর্ণা বেগম পোড়া চাল বের করে দেখালেন। স্কুলের কেডস জোড়াও পোড়া। গার্মেন্টসকর্মী ঝর্ণা বলেন, ‘কালকেই বেতন পাইছি। বাড়িতে পাঠানোর লাইগ্যা পাঁচ হাজার টাকা তোশকের তলে রাখছিলাম। বাইরনের সময়ে হুতাশ তো ছিল না। তিন পোলা-মাইয়ার হাত ধইরা বাইর হইয়া গেছি। আইসা দেখি টাকা পুড়ছে, ঘরের অনেক কিছুই শ্যাষ।’

রান্না করা তরকারিও পুড়ে বাসনের সঙ্গে লেগে রয়েছে। মিরপুর ১২, ঢাকা, ১২ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো
রান্না করা তরকারিও পুড়ে বাসনের সঙ্গে লেগে রয়েছে। মিরপুর ১২, ঢাকা, ১২ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো

বস্তির পাশের বাজারে ছোট ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে বসে আছেন শওকত আলী। কিছু কাঁথা-বালিশ, কাপড় নিয়ে বের হতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘কী করুম মাথায় কিছুই আসতাছে না। ফিরা গিয়া ঘরে কিছুই পাই নাই।’

তবে আগুন কীভাবে লেগেছে, সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন। বাসিন্দারা বলছেন, বস্তির ঝিলপাড় বা ওয়াপদা অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। পোড়া জিনিসপত্র বের করে আশপাশের ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছেন সবাই। যারা মালপত্র কিছু বাঁচাতে পেরেছে, তারা নিয়ে নতুন ঘরের সন্ধানে বের হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আশা করেছেন, স্থানীয় সাংসদ হয়তো তাঁদের খাবার ও কোনো রকমে এখন রাত কাটানোর ব্যবস্থা করে দেবেন।